প্রবীর বিকাশ সরকার


কমপক্ষ ৫-৬ বছর পর মাসীমার সঙ্গে দেখা। তখন তিনি হাঁটাচলা করতে পারতেন, কথাও বলতে পারতেন। খিলগাঁওয়ে স্বপনের বাসায় গিয়েছি, মাসীমাকে প্রণাম করেছি, কথা বলেছি, চা পান করেছি। কিন্ত গত ক’বছরে মাসীমার দুঃখজনক পরিবর্তন আমাকে ব্যথিত করলো। এখন তিনি বিছানায় পড়ে গেছেন। খবরটা স্বপনই বললো।

আমার মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পরে দেশে গেলাম গত মাসে। নানা রোগে-অসুখে ভুগে মা শেষ পর্যন্ত চলেই গেল আমাদেরকে ছেড়ে গত ২৩ জন। শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ দিতে গিয়ে স্বপনকে ফোন করলে বললো, ‘মা খুব অসুস্থ। বিছানায়। দেখাশোনা করতে হচ্ছে। এজন্য চাকরিও ছাড়তে হলো।’

স্বপনের কথা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মায়ের শোক কাটাতে পারছি না। মাসীমার অসুস্থতার খবর শুনে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল, অস্থির হয়ে পড়লাম তাঁকে একটিবার দেখার জন্য কারণ আবার কবে বাংলাদেশে ফিরে আসবো ঠিক নেই। মাসীমা আমার বহুযুগের চেনা-জানা প্রাণের মানুষ। কৈশোর এবং যৌবনের উত্থানকালটা কেটেছে স্বপনের বাসায় এবং মাসীমার উষ্ণ সান্নিধ্যে। বাল্যবন্ধু স্বপনের বাসা ছিল আমার দ্বিতীয় ঠিকানা। যতদিন আমরা ধর্সাগর পশ্চিমপাড়ে পাশাপাশি থেকেছি ততদিন প্রায়শ স্বপনের বাসায় যেতাম। গেলে পরে মাসীমা যে কী খুশি হতেন! কত আড্ডা দিয়েছি আর খাওয়াদাওয়া করেছি তার কোনো হিসাব জানা নেই! আমার ডাক নাম ‘পটু’ মাসীমা আমাকে এই নামেই ডাকতেন। আর আমার মা আমাকে পটু নামে ডাকতো। সেই ডাক মায়ের মুখে আর কোনোদিন শুনতে পাবো না! সেই ডাক এবার মাসীমার মুখে শুনলাম অনেকদিন পর।

স্বপনের সঙ্গে আমার বহু-বহু স্মৃতিময় ঘটনা জড়িত। এমন অবিস্মরণীয় ঘটনাও ঘটেছে তার বাসায় যা আমার জীবনের ভবিষ্যতের লক্ষ্য, দিকদিগন্তই পাল্টে দিয়েছে! সেসব লিখেছি আমার ‘অন্তলান্ত পিতৃস্মৃতি’তে।

পরিশেষে বলি সদ্য চৈতন্য থেকে প্রকাশিত আমার উপন্যাস ‘রাহুল’ এর ‘দিব্য’ চরিত্রটি এবং তার মা যথাক্রমে স্বপন এবং মাসীমা। উপন্যাস জীবনের প্রতিচ্ছবি।

স্বপনের কাছে জানতে পেরে জাপানে ফিরে আসার দিন (৭ জুলাই) সময় বের করে মাসীমাকে মনের আলোয় চোখের দেখা দেখে আসতে পেরেছি সেটা আমার সৌভাগ্য বলতেই হবে। যতদিন দেশে ছিলাম মাসীমার কাছ থেকে অশেষ ভালোবাসা, আদর ও আশীর্বাদ নিয়েছি, বিনিময়ে কিছ্ইু দিতে পারিনি। জানি, মায়েদেরকে সন্তানেরা ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। মাসীমাকে জানাই হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। মাসীমা অবিস্মরণীয় আমার জীবনপথে, তাঁর সঙ্গে বহু স্মৃতি আমার! মাসীমার সর্বাঙ্গীন সুস্থতা কামনা করি।

জাপান প্রবাসী লেখক ও গবেষক