হেদায়েতুল ইসলাম বাবু, গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি শনিবার গাইবান্ধার ৪টি উপজেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দী মানুষরা শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কবলে পড়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অনেক এলাকায় নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গো-ঘাট এলাকার ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে ব্যাপক ভাঙনের ফলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্যার পানির স্রোতে কামারজানি ইউনিয়নের কলমু এসএমসি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দেবে গেছে। ফলে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সাবেক এক চেয়ারম্যানের বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে লেখাপড়া করছে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল শনিবার জেলা প্রশাসকের এক সম্মেলন কক্ষে বন্যা ও ত্রাণ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৩০টি ইউনিয়নের ১৯৪টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০ হাজার ৩শ’ ৩৮টি পরিবারের ২ লাখ ৪১ হাজার ২শ’ ১৩ জন মানুষ। এছাড়া ৫শ’টি পরিবারের ১২ হাজার ৭শ’ ৫৭টি পরিবার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁচা রাস্তা ৮১ কি.মি. এবং ২৫৪ হেক্টর পাট, আউশ, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে ৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্ন্যাতদের জন্য ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র চলমান থাকায় ৪ হাজার ৯২০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে ৩২৫ মে. টন, ১৮ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ২৯৫ মে. টন চাল ও ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে আরও ৩০ মে. টন চাল, ৫০ হাজার টাকা এবং ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট।

তিনি শেষে ত্রাণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে জেলায় মিডিয়া কর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৩ সে.মি. কমে বিপদসীমার ৫১ সে.মি. ও ঘাঘট নদীর পানি ১২ সে.মি. কমে বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচেই রয়েছে।

(এইচআইবি/এএস/জুলাই ১৫, ২০১৭)