স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষীপুর : রায়পুর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের উপসহকারী ও পেশকার, সার্ভেয়ারসহ ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এদের মধ্যে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে অফিসের আসেনি কেউ। তবে মাঝে মধ্যে চাকুরী থেকে অবসপ্রাপ্ত সাবেক পিয়ন মোঃ কামাল হোসেন অফিসে থাকেন, বাকিরা প্রতি মাসে এক দিন অফিসে আসে সরকারের কাছ থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছে ঠিকই। ভুক্তভোগীরা পর্চা, নকশাসহ বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

সেবার নামে প্রতারণার অভিযোগ এনে ভুক্তভোগীরা সেটেলমেন্ট অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপসারণ ও অফিসের শত ভাগ কার্যক্রমের দাবি জানিয়েছেন। তবে তাদের দাবি, এই অফিসে কোন কাজ না থাকায় সবাইকে ঢেপুতেশান করে অন্যস্থানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে পর্চা, নকশাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সেটেলমেন্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হতো। সাধারণ মানুষের হয়রানি কমাতে সরকার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের সামনে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে কার্যক্রম চালু করে। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে দুই জন কর্মকর্তাসহ মোট নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।

এ অফিসের মূল দায়িত্বে থাকা সঞ্চলয় তালুকদার তিনি বর্তমানে রয়েছেন সিলেটে। তাই লক্ষীপুর অফিসের অফিসার শামছুল আলম চৌধুরীকে রায়পুর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ গত ৫ বছর ধরে অফিস আসেনি। তবে সাবেক এলএমএসএস কামাল মাঝে মধ্যে অফিসে আসলেও দায়িত্ব থাকা অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো খোঁজখবর নেই। সাধারণ মানুষ অফিসে এসে কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সেটেলমেন্ট অফিসের সব কক্ষই বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে ওই অফিসের সাবেক পিনয় একটি একটি কক্ষ খুলে বসে। এসময় পিয়ন কামাল লোকজন এলে তাদের জানিয়ে দেন অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ নেই, লক্ষীপুর জেলা ও নোয়াখালী অফিসে যোগাযোগ করেন। বাকি কক্ষগুলো সব সময়ই তালাবদ্ধ থাকে। তবে কামাল বর্তমানে ওই অফিসের কেউ না হলে তার কাছে একটি ছবি থাকে। তাই সে মাঝে মধ্যে অফিস খুলে।

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম লিনট, আমির হোসেন সাইফুল ইষলামসহ আরও অনেকেই জানান, তারা সেটেলমেন্ট অফিসে এসেছেন পর্চাসহ বিভিন্ন প্রকার জমির কাগজপত্র তুলতে। গত পাঁচ বছর ধরে এই অফিসের এসে কোনো দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের পাননি তারা। সাবেক অফিস পিয়ন তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, অযথা এখানে হয়রানি না হয়ে চলে যেতে বলা হয়।

এসব ভুক্তভোগী কোনো প্রকার সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি- অফিসে না এসে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছে তাদের অপসারণ ও অফিসের শত ভাগ কার্যক্রম করা হোক।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার মোহাম্মদুল বারী বলেন, উপজেলার দেনায়েতপুর ছাড়া সকল খতিয়া পাইনাল হওয়ার পর বিলি করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫-৬ বছর ধরে রায়পুর অফিসে কোন কাজ না থাকায় আমাকে ঢেপুতেশান করে লক্ষীপুর অফিসে পেশকারের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। তাই রায়পুর সেটেলমেন্ট অফিসে আমাকে যেতে হয়। অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও ঢেপুতেশান করে বিভিন্ন স্থানে কাজের দায়িত্ব দিয়ে অস্থাই ভাবে রাখা হয়েছে। রায়পুর অফিসের নিয়োগের কারণেই সবাইকে বেতর-ভাতা তুলতে হয় প্রতি মাসে রায়পুরে এসে। তবে সাবেক পিয়নকে মাঝে মধ্যে অফিসটি খোলার জন্য বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিল্পী রানী রায় বলেন, এ দফতরটি আমাদের অধীনে নয়, তাই তদারকি করতে পারি না। আমার অফিসের সামনে সেটেলমেন্ট অফিসটি হলেও তাদের মতো করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারপরও সাধারণ মানুষের হয়রানি কমাতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে সরকারী কোন অফিসর বন্ধ থাকার কোন নিয়ম নেই।

(পিকেআর/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৭)