রাজন্য রুহানি, জামালপুর : মসজিদসহ গ্রাম রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে যমুনার শাখা নদী বইদেখালে বাঁধ নির্মাণ করছে স্থানীয় লোকজন। গ্রাম রক্ষার এই স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নিয়েছে গ্রামের বউঝি’রাও। স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেয়া প্রায় চার শতাধিক লোককে রুটি তৈরি করে খাওয়াচ্ছে তারা। ১০ দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বালিভর্তি বস্তা ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ হচ্ছে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের সাদিপাটি গ্রামে। শিশুকিশোর, ছাত্র-শিক্ষক, বৃদ্ধ, কৃষক-কৃষাণীসহ নানা শ্রেণিপেশার গ্রামবাসীদের প্রাণশক্তিতে এগিয়ে চলছে বাধঁ নির্মানের কাজ।

মেলান্দহের কুলিয়া ইউনিয়নের অবহেলিত গ্রামের নাম সাদিপাটি। প্রতিবছর বন্যায় আঘাত হানে এই গ্রামটিতে। সেই সাথে নদীভাঙন তো রয়েছেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে এ গ্রামের বাসিন্দারা। সাদিপাটি গ্রামের চারপাশে বন্যার পানি। চারপাশে থৈ থৈ পানির মাঝে সাদিপাটি জামে মসজিদসহ গ্রামের একাংশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যমুনার শাখা নদী বইদে খালের তীব্র ঘুর্ণিস্রোত আঘাত হানছে উঁচু স্থানটিতেও।

নদী ভাঙতে ভাঙতে বইদেখাল মসজিদের ১০ গজ কাছে এসে পড়েছে, যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে এই মসজিদটিও। নদীটির ভাঙনের মুখে সাদিপাটি গ্রামটিও নিঃশ্চিহ্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। মসজিদসহ বাপদাদার ভিটা বাঁচাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী-পুরুষ এমনকি শিশুকিশোররাও বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে দশ দিন ধরে।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার সময় কলেজ পড়ুয়া ফকরুল ইসলামের (২৫) সাথে কথা হয়। তিনি উত্তরাধিকার ৭১ ও বাংলা ৭১ কে বলেন, ভাঙনের হাত থেকে গ্রামকে বাঁচানোর দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনপ্রতিনিধিদের। কুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম নির্বাচিত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত সাদিপাটি গ্রামে পা রাখেনি বলে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেওয়া লোকজন অভিযোগ করেছেন।

তারা আরো বলেন, আমরা একদিকে পানিবন্দি, অপরদিকে ভাঙনের মুখে পড়লেও খোঁজ নিচ্ছেন না চেয়ারম্যান। কালোবাজারে ভিজিটির ধান বিক্রির অভিযোগে জেল খেটে সদ্য জামিনে বের হওয়া এই চেয়ারম্যানের জনগণের সেবার তো বালাই নেই, বরং লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছেন বলে ওই গ্রামের মো. হাজী হবিবর রহমান (৭৫), আব্দুল মজিদ মন্ডল (৬৫), আবুল হোসেন (৫৫), শাহিনুর (৩৫) এর মতো এ গ্রামের অনেকেই জানালেন।

বন্যাদুর্গতরা বলেন, মেম্বর চেয়ারম্যানের ভরসায় থাকলে ঘরবাড়ি নিয়ে বইদেখালের পেটে চইল্যা যামু। আমাদের গ্রাম আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। এই প্রেরণা গ্রামবাসীর মাঝে দেখা দিলে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাধঁ নির্মানের কাজে হাত দেয়। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাঁধের কাজ। মসজিদের পিছন দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে বাড়িতে বাড়িতে রুটি বানানোর ধুম। কেউ পাত্রে আটা গুলছে, কেউ বেলনা পিড়ায় আটার মুঠা বেলে রুটি বানাচ্ছে, চুলায় রুটি তাওয়াচ্ছে গ্রামের বউঝিঁ’রা।

রুটি তৈরিকালে পরিবর্তনের সাথে কথা বলেন বানেছা (৪০), নূরজাহান (৪২), আয়েশা বেগম (৫০), ষষ্ঠশেণির স্কুলছাত্রী মিতুসহ অনেকেই। তারা বলেন, আমরাও আমাদের মসজিদসহ গ্রাম রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাধঁ নির্মাণে অংশ নিয়েছি।

পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী বলেন, অনুন্নোয়ন খাতে বরাদ্দ তেমন একটা নেই। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেলান্দহের সাদিপাটি গ্রামে ভাঙন চলছে। ভাঙন রোধে আমি গত বছর বাঁধ নির্মাণের চাহিদাপত্র পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটি পাশ না হওয়ায় বাঁধটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে কুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়। জেল থেকে বেরিয়েই আমি অসুস্থ। আগামী কাল তিনি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে জানান।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৬, ২০১৭)