চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটছে গাইবান্ধার জেলেদের
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : ‘আমরা মাছ ধরতে যেতে পারছি না। এখন সবাই বসে বসে সময় কাটাই। সকালে চিড়া-মুড়ি খেয়েছি। রাতে রুটি খেয়েছি। আত্মীয়-স্বজনরা ভাত দিয়ে গেলে তাই খাই, না দিলে খেতে পারি না। আমাদের এই কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না।’
কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (৪৫) ও রতন চন্দ্র দাস (৩৫)।
গত ১২ জুলাই দিবাগত গভীর রাতে নদীর ধারে বেঁধে রাখা তাদের মাছ ধরার দুইটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মাটি ধসে পড়ে নদীতে ডুবে যায়। নৌকায় মাছ ধরার দুইটি বেড় জালও ছিল। নৌকা দুইটির সঙ্গে মাছ ধরায় সহযোগিতা করতো আরও ১২ জন জেলে। এসব পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬৫ জন। ফলে এসব পরিবারের সদস্যরা এখন খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
নৌকা দুইটির অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও টাকা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে তীরে টেনে তুলতে পারছেন না তারা। বেশি দেরী হলে নৌকা দুইটি নদীর গভীরে হারিয়ে যেতে পারে ও নৌকা দুইটির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামটিতে ভাঙন শুরু হয়। এতে করে একটি স্কুলসহ অনেক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ও রতন চন্দ্র দাসের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা বাড়ির উঠানে বসে আছে। তাদেরও বসতবাড়ির জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর তারা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। সেই ঘরের কাছেও এখন ভাঙন এসে পড়েছে।
রতন চন্দ্র দাস বলেন, নদীতে মাছ ধরতে যেতে না পেরে আমাদের ২১টি পরিবারের প্রায় ১০০ জন মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। একদিকে নদী ভাঙন অন্যদিকে বেকার বসে আছি সবাই। দোকানে বাকী ও ঋণ করে চলছি। এখন কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।
কৃষ্ণ চন্দ্র দাস বলেন, নদীতে নৌকা দুইটি ডুবে গিয়ে আমাদের প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। নৌকা দুইটির অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছি। কিন্তু টাকা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে তীরে টেনে তুলতে পারছি না। বেশি দেরি করলে হয়তো নৌকা দুইটি নদীর বেশি গভীর চলে যাবে। তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের সঙ্গে নদীতে মাছ ধরেন রনজিত কুমার দাস (৪৫)। তিনি বলেন, নৌকা ডুবে যাওয়ার পর থেকে মাছ ধরতে যেতে পারছি না। এখন মা, ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। কোনো সহযোগিতাও পাইনি কারও কাছ থেকে।
সুকুমার চন্দ্র দাস (৩৫) বলেন, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন ওই নৌকা ও বেড় জাল ছিল। সেটাও মাটি ধসে নদীতে ডুবে গেল। এখন কোনো কাজ করতে পারছি না। বাবা-মা, ভাই-বোনদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
এ ছাড়া ওই একই দিন রাতে নদীর ধারে রাখা লাল মোহন দাসের মাছ ধরার বেড় জাল মাটি ধসে নদীর স্রোতে ভেসে যায়। তার সঙ্গেও কাজ করতো আরও ছয়জন জেলে। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যাও প্রায় ৩৫ জন। তারাও মাছ ধরতে যেতে না পেরে খেয়ে না খেয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মতিয়ার রহমান বলেন, নদীর পাড়ে রাখা নৌকা দুইটির ওপর মাটি ধসে পড়ে ডুবে গেছে। নৌকা দুইটি উদ্ধারে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো।
কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির বলেন, নৌকা দুইটি ডুবে যাওয়ার কথা শুনেছি। এসব পরিবারের কয়েকজনকে ১০ কেজি করে চাল ও নগদ ১ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমি ওই গ্রামে যাচ্ছি, নৌকা দুইটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম সরকার বলেন, নৌকা দুইটি নিখোঁজ থাকলে ডুবুরি দিয়ে তা খুঁজে দেয়া হতো। কিন্তু তীরে টেনে তুলে আনার কোনো সরঞ্জামাদি আমাদের নেই।
(ওএস/এসপি/জুলাই ১৮, ২০১৭)