স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাবলিক পরীক্ষা পর্যন্ত- সর্বস্তরের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়া যেন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বলছেন, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।

সর্বশেষ ঢাকা বোর্ডের অধীন উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ কারণে স্থগিত ওই পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ জুন। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে আগের মতোই আরো দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

৩ এপ্রিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কয়েকজন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, শুরু থেকেই এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি বোর্ড। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

তবে ঢাকা বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি ইন্টারনেট ও মুঠোফোনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার রাত আটটার দিকে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দপ্তরে একটি ফ্যাক্সবার্তা আসে। সেটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, মূল প্রশ্নের সঙ্গে সবই মিলে গেছে। এরপর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বলেন, ফ্যাক্সটি কোত্থেকে এসেছে, তা জানা যায়নি।

মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আসে ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে। সেখানে প্রশ্নপত্র উদ্ধারও হয়।

বুধবার সন্ধ্যায় নগরকান্দায় চারটি ফটোকপির মেশিন ও ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। নগরকান্দার প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্ন মিলে যায়। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্নগুলো ফ্যাক্স করে ঢাকা বোর্ডে পাঠানো হয়।

প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২ আইনে শাস্তির এই বিধান রয়েছে। আইনটি প্রণয়নের পর বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় অন্তত ৬২টি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে গত বছরের নভেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায়। ওই পরীক্ষার প্রায় সব বিষয়ের প্রশ্নই ফাঁস হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে দেখা যায়, ইংরেজিতে ৮০ শতাংশ এবং বাংলায় ৫০ শতাংশ প্রশ্নের মিল পাওয়া গেছে। কিন্তু তারপরও পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি।

(ওএস/এটি/ এপ্রিল ১১, ২০১৪)