স্বাস্থ্য ডেস্ক : আর কোনও সন্দেহ নেই। এবার একথা একেবারে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে প্লাস্টিক বোতলের জল খেলে শরীর খারাপের আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আসলে প্লাস্টিকের মধ্যে উপস্থিত বেশ কিছু ক্ষতিকর উপাদান জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এমন কিছু যৌগ তৈরি করে যা আমাদের দেহের সুস্থ থাকার পক্ষে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এর পরেও যে সাধারণ মানুষ প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার ছাড়ছেন না। কিন্তু আর নয়। এবার থামতেই হবে।

না হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বেই এই সম্পর্কিত মৃত্যুহার যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণে প্লাস্টিকের উপাদান ব্যবহার তকা হয় জানা আছে? ১৯৯৬ সালে সারা ভারতে যেখানে ৬১ হাজার টন প্লাস্টিকের ব্যবহার হত, সেখানে ২০০৭ সালে এই সংখ্যাটা বেড়ে প্রায় ৮,৫০০,০০০ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার বুঝতে পারছেন তো সাবধান হওয়াটা কতটা জরুরি হয়ে উঠেছে। প্লাস্টিক বোতলে জল খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে? চলুন চোখ ফেরানো যাক সেদিকে।

ক্ষতিকর রাসায়নিক:

প্লাস্টিক বোতলে উপস্থিত হাজারো কেমিক্যাল জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আরও বেশ ক্ষতিকর কেমিক্যালের জন্ম দেয়, যেমন ফ্লোরায়িড, আর্সেনিক এবং অ্যালুমিনিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরের পক্ষে ভাল নয়। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে এই রসায়নিকগুলি শরীরে নিয়মিত ঢুকলে বিষক্রিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তো এক কথা বলতেই হয় যে, প্লাস্টিক বোতলে জল খাওয়া মানে নিজেকে স্লো পয়েজেন করা। আর এমনটা নিশ্চয় আপনি নিজের সঙ্গে করতে চান না?

ডায়োক্সিনের উৎপাদন বেড়ে যায়:

আমরা অনেকেই গাড়িতে ব্লাস্টিক বোতলে জল রেখে দি। এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। কেন জানেন? কারণ সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলেই প্লাস্টিক বোতলে ডায়োক্সিন নামে এক ধরনের বিষাক্ত উপদানের জন্ম হয়।

এই উপাদানটি জলের সঙ্গে বারে বারে শরীরে প্রবেশ করলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রাকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে শুধুমাত্র রোদে রাখলেই প্লাস্টিক বোতলে ডায়োক্সিন উৎপাদন বেড়ে যায়, এমন নয়। প্লাস্টিক বোতল গরমে রেখে দিলেও একই ঘটনা ঘটে।

বি পি এ:

প্লাস্টিক বোতলে জল রাখলে "বাইফেনাল-এ" নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ হয়, যা শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, বাচ্চা হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই আর প্লাস্টিক বোতলে জল না রেখে আগের মতো কাঁচের বোতলের ব্যবহার শুরু করুন। দেখবেন শরীর সুস্থ থাকবে।

লিভার ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়বে:

প্লাস্টিক বোতলে উপস্থিত "ফেতালেটস" নামে একটি রাসায়নিক জলের সঙ্গে মিশে আমাদের শরীরে প্রবেশ করা মাত্র কোষের ভিভাজনে নানা পরিবর্তন আনতে শুরু করে দেয়, যা থেকে লিভার ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তাই আপনি যদি না চান এমন মারণ রোগে আক্রান্ত হতে, তাহলে দয়া করে প্লাস্টিক বোতলে জল খাওয়া ছেড়ে দিন।

মিনারেল ওয়াটারও বিষে পরিণত হচ্ছে:

বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সব মিনারেল ওয়াটারই প্লাস্টিক বোতলে স্টোর করা হয়। ফলে সেই জলে আর শরীরের ভাল করার কোনও উপাদানই বেঁচে থাকে না। শুধু তাই নয়, আজকাল অনেক কোম্পানি ভিটামিন মিশ্রিত মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করেন। এমন ভিটামিন সমৃদ্ধ জল খেলে শরীরের কতটা উপকার হয় জানা নেই, তবে অপকার যে হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এই সব ভিটামিন সমৃদ্ধ মিনারেল ওয়াটারে অনেক ক্ষেত্রেই মেশানো হচ্ছে ফুড ডাইস এবং হাই ফ্রোকটোস কর্ন সিরাপ। এই উপাদানগুলি কিন্তু শরীরে পেক্ষে একেবারই ভাল নয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়:

প্লস্টিক বোতলে রাখা ঠান্ডা জল খেতে তো ভাল লাগে। কিন্তু সেই জল যে আপনার আয়ু কমিয়ে দেয়, সে সম্পর্কে কি কোনও ধারণা আছে? একাধিক গবেষণায় একথা প্রামাণিত হয়েছে যে প্লস্টিক বোতলে থাকা একাধিক রাসায়নিক আমাদের রক্তে মিশে যাওয়ার পর একে একে শরীরের একাধিক অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই কমিয়ে দেয় যে নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে আজ থেকেই প্লাস্টিক বোতলে জল খাওয়া বন্ধ করুন। না হলে কিন্তু...

প্লাস্টিকের বোতলে যে বিষ রয়েছে তার থেকে বেঁচে থাকার উপায়:

১। প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে স্টেনলেস স্টিলের বোতল বা কাঁচের গ্লাসের ব্যবহার শুরু করুন।
২। ভাল কোম্পানির ফিল্টার ব্যবহার জরুরি। আর সেই ফিল্টার করা জল কাঁচের বা সেরামিকের পাত্রে সংগ্রহ করে রাখুন।
৩। প্লাস্টিকের বোতলে রাখা জল দিয়ে ভুলেও রান্না করবেন না।
৪। যদি একান্তই প্লাসিটেক বোতল ছাড়া আর কোথাও জল রাখার ব্য়বস্থা আপনার বাড়িতে না থাকে তাহলে ভুলেও কখনও সেই বোতলগুলি রোদে অথবা গরম জায়গায় রাখবেন না। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিকের বোতল মাইক্রো ওয়েবের উপর রাখলেও বোতলের তাপমাত্র বৃদ্ধি পায়। তাই এমনটা করাও চলবে না।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২১, ২০১৭)