মারুফ সরকার, সিরাজগঞ্জ : রায়গঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় বামনবাগ ও খেতাবগাঁতি গ্রামে বিদ্যুত দেয়ার নামে বিদ্যুত প্রত্যাশিত গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী, পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের চিহ্নিত দালাল, ও ঠিকাদারের যোগসাজশে বিভিন্ন অজুহাতে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জ সদর, ও রায়গঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বামনবাগ ও খেতাবগাঁতি গ্রাম। এই গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এখানকার বসতির প্রায় নব্বই ভাগ মানুষই কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্রপীড়িত এই অঞ্চলের মানুষ অতিশয় সহজ-সরল। বামনবাগ ও খেতাবগাঁতি গ্রাম দু’টি তিন উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এই এখানকার রাস্তাঘাট পাকা হয়নি এখনও। হয়নি কোনো উন্নয়ন। স্বাধীনতার পর অদ্যাবধি এই এলাকায় বিদ্যুতের আলোর ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমান ডিজিটাল সময়েও এখানকার ছেলেমেয়েরা কুপি বাতি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করে। যার কারণে ওই গ্রামে শিক্ষার হারও কম। অতীতের সব সরকারের আমলেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এলাকার সহজ-সরল মানুষদের একটাই দাবি ছিল ‘বিদ্যুত চাই’। কিন্তু কথা দিয়ে কেউ কথা রাখেনি।

বছর দুই পূর্বে উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের বামনবাগ গ্রাম ও হাট সহ খেতাবগাঁতি গ্রাম বিদ্যুতায়নের আওতায় পল্লীবিদ্যুতের মাষ্টারপ্লানে বিনামূল্যে আট কিলোমিটার বিদ্যুত লাইন। শুরু হয় জরিপ কাজ। পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ এলাকায় মাইকিং করে দরখাস্ত আহবান করে বিদ্যুত সংযোগের জন্য। মাষ্টার প্লান অনুসারে লাইন বসানোর কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়। এই সুযোগে এলাকার প্রভাবশালী আকবর মেম্বরসহ কতিপয় লোক গ্রামের মানুষকে বোঝাতে থাকে ‘টাকা ছাড়া দ্রুত কাজ হবে না; পল্লীবিদ্যুত অফিসে টাকা খরচ করলে লাইন বসানোর কাজ তাড়াতাড়ি হবে।’ ওই কথা শুনে গ্রামের লোকজন শরীকান্ত মাতব্বরদের সাথে বৈঠক করে আবাসিক প্রতি মিটারের জন্য দুই হাজার করে টাকা তুলে গ্রাম্য প্রধানদের মাধ্যমে স্থানীয় মেম্বর আকবর আলীর কাছে জমা দিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। কিন্তু দুই বছর সময় পার হয়ে গেলেও এখনও লাইন স্থাপনের কাজে হাত না দেয়ায় ফুসে উঠেছে গ্রামের বিক্ষুব্ধ লোকজন। সরেজমিনে বামনবাগ হাট ও গ্রামে গেলে এসব তথ্য জানান ভূক্তভোগী শতশত মানুষ ও ওই এলাকার মাতব্বরগণ।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বামনবাগ ও খেতাবগাঁতি গ্রামে ও হাট এলাকায় আট কিলোমিটার বিদ্যুত লাইন বসানোর কাজে প্রাথসিকভাবে সম্ভাব্য গ্রাহক জরিপ করে টেকিংশীট তৈরি করে। এই টেকিংশীটে মোট ৫২২ জনের যে তালিকা করে তাদের মধ্যে আবাসিক মিটার সংখ্যা ৪৯৫ টি, ২২টি বানিজ্যিক এবং শিল্প সংযোগ পাঁচটি। এর মধ্যে ৪৯৫টি আবাসিক মিটারের অনুকূলে প্রায় দশ লক্ষাধিকসহ ২২টি বানিজ্যিক ও পাঁচটি শিল্প সংযোগের জন্য মোটা অংকের টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয় বলে জানান ভূক্তভোগী গ্রামবাসি।

সরেজমিন বামনবাগ গ্রামের মাতব্বর আব্দুল কুদ্দুস(৬৫) জানান, গ্রামের লোকজনকে ডেকে বৈঠক করে মিটার প্রতি দুই হাজার করে চাঁদা তুলে আকবর মেম্বরের কাছে আমি তিন দফায় এক লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। একই গ্রামের ফজের আলী মন্ডল জানান,‘গ্রামের লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করে পল্লীবিদ্যুত অফিসে খরচের জন্য আকবর মেম্বর মিটার প্রতি দুই হাজার করে টাকা চায়। আমার আন্ডারে ৫৫ মিটারের এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা মেম্বরের হাতে তুলে দেই।’ সাবেক মেম্বর খলিল হাজী ৮০ মিটারের এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আকবর মেম্বরের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান। একই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইয়াছিন সেখ, হাজী হামিদ সরকার, জামাল উদ্দিন, আবু ছাইদ মন্ডল, আব্দুল হাকিম,জয়নাল আবেদীন, মহির উদ্দিনসহ অনেকেই।

টাকার লেনদেনের কথা অস্বীকার করে ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বর আকবর আলী বলেন, ‘বামনবাগ গ্রামে বিদ্যুত লাইন বসানোর জন্য সব রকমের সহযোগিতা আমি করেছি। কাজও এগিয়ে গেছে। আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হয়রানী করার চেষ্টা করছে।’

(এমএস/এএস/জুলাই ২২, ২০১৭)