মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : স’মিল সেক্টরে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান, ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন, সরকার ঘোষিত নিন্মতম মজুরির গেজেট কার্যকর ও বেআইনীভাবে কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে স’মিল শ্রমিক সংঘ কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল (শনিবার) বিকেলে কমলগঞ্জ উপজেলা পৌরসভার সামনে স’মিল শ্রমিকরা জমায়েত হয়ে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড সহকারে মিছিল শুরু করে ১০ নম্বর সড়ক ও স্টেশন রোড প্রদক্ষিণ করে ভানুগাছ চৌমুহনীতে এসে সমাপ্ত হয়। পরে ভানুগাছ চৌমুহনীতে স’মিল শ্রমিক সংঘ কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি প্রবীণ স’মিল শ্রমিকনেতা মাখন বক্তের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, স’মিল শ্রমিক সংঘ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ও মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ আরজান আলী। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, স’মিল শ্রমিক সংঘ বালাগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর নূর, ওসমানীনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি এনাম মিয়া, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইজ্জাত মিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া ও সহ-সভাপতি আব্দুর মজিদ, কবির মিয়া, ফরিদ মিয়া প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন স’মিল শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত ৮-৯ টা পর্যন্ত দৈনিক ১০-১২ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য হন। অথচ দেশের প্রচলিত শ্রমআইনের দৈনিক ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে। স’মিল সেক্টরে শ্রমিকদের কাজের কোন নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা নাই, অর্জিত ছুটি, চিকিৎসা ছুটি, উৎসব ছুটিসহ শ্রমআইনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও কার্যকর করা হয় না।

সাপ্তাহিক ছুটি প্রদান করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছুটির দিনের মজুরি দেওয়া হয় না। শ্রমআইনে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান বাধ্যতামূলক হলেও মালিকরা এসবের ধারধারেন না। মালিকরা যখন তখন তাদের ইচ্ছে মাফিক শ্রমআইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের ছাঁটাই করে দেন, অথচ শ্রমআইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে কোন শ্রমিককে চাকুরী হতে বরখাস্ত করতে হলে ১২০ দিন আগে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে।

গত রমজান মাসে পতনঊষার একটি স’মিলে একজন শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও মালিক অদ্যাবধি তার আইনানুগ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করেননি। মৃত্যু ঝুকি নিয়েই এই পেশায় শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। স’মিল শ্রমিকদের যেমন নেই কাজের পোষাক, মাক্স, চশমা, গ্লাভস, তেমনি প্রতিষ্টানে ক্রেন ও ট্রলি না থাকায় অমানবিক পরিশ্রম করে বিরাট বিরাট গাছ টেনে মেশিনে তুলতে গিয়ে স’মিল শ্রমিকরা প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হন। কিন্তু মালিকরা আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বা উপযুক্ত চিকিৎসা খরচ প্রদান করেন না।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ২০১৪ সালে স’মিল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য নিন্মতম মজুরি ঘোষণা করা হলেও এখনও অধিকাংশ স’মিলে নিন্মতম মজুরির গেজেট কার্যকর হয়নি। শ্রমিকরা এসব সমস্যা সমাধানে বারবার লিখিতভাবে মালিক সমিতি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামে পথে অগ্রসর হয়ে দাবি আদায় করে নিতে হবে।

(একে/এসপি/জুলাই ২৩, ২০১৭)