শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের সখিপুরে চাঞ্চল্যকর লিজা হত্যাকারিদের আটক করেছে পুলিশ। হত্যাকারি ফরিদ শেখ হত্যার দায় স্বীকার করে এর রোমহর্ষক জবানবন্দি দিয়েছে আদালত ও পুলিশের কাছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিস্তারিত জানিয়েছেন শরীয়তপুরের ভার প্রাপ্ত পুলিশ সুপার।

সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) মো. এহসান শাহ সহ পুলিশের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থেকে আসামী ফরিদ শেখকে সেখানে হাজির করেন। এসময় লিজাকে অপহরণ করে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আসামীদ্বয় শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে বলে জানানো হয়। এর পর বিকেল ৫ টায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত মূূূূখ্য বিচারিক হাকিম শেখ মো. মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামী ফরিদ শেখ। অপর আসামী জাকির শেখকে তদন্তের স্বার্থে আদালতে হাজির করা হয়নি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই শনিবার সখিপুর সরদারকান্দি গ্রামের লেহাজ উদ্দিন শেখের মেয়ে ও ১ নং সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিজা আক্তার (১১) সকাল সাড়ে ১০ টার পর থেকে নিখোঁজ হয়। তারপর থেকে লিজাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৬ জুলাই রবিবার সখিপুর থানায় লিজা নিখোঁজ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন লিজার চাচি নাসরিন আক্তার। নিখোঁজের ৮ দিন পর ২২ জুলাই শনিবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে সখিপুর ছৈয়ালকান্দি গ্রামে বুলবুল সরদারের পাট ক্ষেতে হাটু পানিতে লিজার অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়। ২৩ জুলাই লিজার বাবা লেহাজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, লিজা নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে ফরিদ শেখ লিজাকে সাইকেল চালাতে টাকা দেয়। এরপর সাইকেল চালানো শেষে আবার তাকে ৫০০ টাকা নোট দেয়। লিজা সেখান থেকে ৩ শত দেয় তার সহপাঠি মানিককে। এলকাবাসী জানান, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত লিজাকে বাড়ির কাছে সখিপুর-মোল্যার হাট সড়কে দেখা গেছে। এরপর আর কেউ তাকে দেখেনি। লিজা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ফরিদ শেখকে এলাকায় দেখা যায়নি। তিনি নারায়নগঞ্জ চলে যায়। তিন দিন পরে আবার ফিরে আসে। সেই থেকেই ফরিদের প্রতি নিহত লিজার পরিবারের সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
লিজার পরিবারের সন্দেহের ভিত্তিতে লাশ উদ্ধারের পর ফরিদকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে লিজাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ফরিদ। ফরিদের দেওয়া তথ্য মতে তার সহযোগি জাকির শেখকেও গ্রেফতার করা হয়।

খুনি আসামী ফরিদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, ১৫ জুলাই দুপুর ১২ টার দিকে লিজাকে টাকার লোভ দেখিয়ে আসামী জাকিরের মামা আলাউদ্দিন শেখের বসত ঘরে নিয়ে লিজাকে ধর্ষনের প্রস্তাব দেয়। এতে লিজা প্রথমে অসম্মতি প্রকাশ করে এবং বিষয়টি তার মা বাবাকে জানিয়ে দিবে বললে জাকির ক্ষিপ্ত হয়ে লিজার গলা চেপে ধরে আর ফরিদ লিজার হাত-পা চেপে ধরে। এভাবে লিজাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। রাত সাড়ে ৮ টার পরে একটি ময়লাবাহি রিক্সাভ্যানে করে ছৈয়ালকান্দি গ্রামে নিয়ে পাট ক্ষেতে ফেলে আসে লিজার মরদেহ। এরপর ফরিদ রাত সাড়ে ১০ টায় লঞ্চ যোগে নারায়নগঞ্জ চলে যায়।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার লিজার ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসকের বক্তব্যকে পূঁজি করে কোন কোন সংবাদ মাধ্যম বিভ্রান্তি ছরিয়েছে দাবি করে উষ্মা প্রকাশ করেন। এসময় পুিলশ কর্মকর্তা বলেন, লাশের ময়না তদন্তের দায়িত্বরত চিকিৎসক হয়তো পেশায় নবীন হিসেবে তার এহেন লাশ দেখা কিংবা ময়না তদন্ত করার অভিজ্ঞতা ছিল না তাই এ বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের একটি স্পর্শ কাতর তথ্য সংবাদকর্মীদের সরবরাহ করে খবর প্রচার ও প্রকাশ করায় গোটা দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উৎকন্ঠিত হয়েছে। দ্রুত লাশ পচাতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হতে পারে, চিকিৎসকের এমন তথ্য প্রদান করারও তিনি সমালোচনা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলাটি নিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে। যে সব বিষয়ে সন্দেহ পোষন করা হচ্ছে তার সবটা মাথায় রেখেই পুলিশ তদন্ত করবে।

(কেএনআই/এএস/জুলাই ২৪, ২০১৭)