চৌধুরী আবদুল হান্নান


গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সমকালের প্রথম পাতায় ‘অক্সিজেনে চলছে সোনালী ব্যাংক’ শিরোনামে একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ব্যাংকটির ওপর পরিচলিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদন বিশ্লেষন করে ওই খবরটি ছাপা হয়েছিল। তাতে আরও পরিষ্কার করে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, সরকারি সহযোগিতায় অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে আছে রাষ্ট্রখাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংক।
অন্যান্য সরকারি ব্যাংকগুলোর ভিন্ন কোনো চিত্র নেই। সরকারি ব্যাংক গুলোকে প্রায় প্রতি বছরই মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য কিছু অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হয়। আর উচ্চকন্ঠে প্রচার হতে থাকে, জনগনের করের টাকা থেকে ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হচ্ছে এবং তাতে সরকারি ব্যাংকের সুস্থতা নিয়ে জনমনে আশংকা সৃষ্টি হয়, বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরী হয়। অথচ জনগনের বিশ্বাসই ব্যাংক ব্যবস্থার মূলভিত্তি।
এ ভাবে ভর্তুকির নামে দান খয়রাত না করে প্রতিটি সরকারি ব্যাংকের শত শত ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের মধ্য থেকে মাত্র ১০ জন বড় ঋণ খেলাপিদের বকেয়া আদায় করার ব্যবস্থা করে দিন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী। তাতে ব্যাংক গুলো কেবল তাদের দুর্বলতাই কাটিয়ে উঠবে না, ঘুরে দাঁড়াবে।

বলা হবে ওরা রাঘব-বোয়াল, অনেক ক্ষমতাশালী। কিন্তু তারা কী সরকারের থেকেও শক্তিশালী। ব্যাংকিং খাতকে সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে আর এক অপকৌশল- ঋণ অবলোপন। গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ সব ঋণ আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় ক্ষতি মেনে নিয়ে ব্যাংকিং খাতে ঋণ অবলোপনের ঘটনা ঘটছে। এ টাকা ব্যাংকের ‘আলাদা’ খাতে চলে যায় যা আদায়ের তৎপরতা থাকে না বললেই চলে।

সরকারি ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ যারা অবলীলায় বের করে নিতে পারে, ফেরত দিতে হয় না তারা এ অর্থের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার করেনি, তা বিশ্বাস করা যায় না। দেখা যাচ্ছে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো টাকার পরিমান বেড়ে চলেছে।

আর এ অর্থ তো জনগণের আমানতের টাকা। অন্যদিকে সরকারি ব্যাংকের অর্থ লুটপাট, আত্মসাৎ, পুকুর চুরির খবর তো কারও অজানা নয় কিন্তু এর প্রতিকারের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে কী?
ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যর্থ হচ্ছে? তবে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার মতো দায় সারা কাজ দেখে তাদের দূর্বলতাই প্রকাশিত হয়।
অপর দিকে এ খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক অর্থমন্ত্রণালয় যেন ঘুমিয়ে আছে।

কেন্ত্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের দ্বৈতশাসনের কবলে ব্যাংক খাত। বলে যা হবার তই হচ্ছে। রোগীকে মাঝে মাঝে অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, আরও অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
দীঘদিন তো সরকারি ব্যাংকগুলো অক্সিজেনে চলছিল, বর্তমানে তাদের অবস্থার কী উন্নতি হয়েছে?
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় ব্যাংকের নাজুক অবস্থার কথা গোপন থাকেনি। ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার জন্য কারা দায়ী, এ বিতর্ক এখন অর্থহীন।

ব্যাংক ব্যবস্থা বা দেশের অর্থভান্ডার যদি অরক্ষিত থাকে বা শূন্য হতে থাকে তা হলে তো দেশের সকল উন্নয়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে।

এখন তো একমাত্র ভরসা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি ব্যাংক বা ১৬ কোটি মানুষের মালিকানার ব্যাংকগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দৃষ্টি দেবেন।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার