স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর : আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগে পশু খামার ও বাসা-বাড়িতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখেরও অধিক পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভারত থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় এবং ভালো দাম পাবার আশায় বিভাগের অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কোরবানির বাজার ধরার জন্য এ পশু পালন করছেন।

ভারতীয় গরুর উপর নির্ভর না করে নিজেদের গরুতেই কোরবানির চাহিদা মেটানোসহ লাভের আশায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এ অঞ্চলের খামারিরা।

এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে রংপুরের বিভিন্ন পশুর হাট নিয়ে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে এ অঞ্চলে। কোথাও কোরবানির পশুর হাট জমে না উঠলেও ইতোমধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে আসছেন।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এই বিভাগের আট জেলায় এক লক্ষ ১০ হাজার ৫২০টি বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৩ হাজার ১৫৫টি এবং নীলফামারী জেলায় ১৭ হাজার ৫৮৬টি। এছাড়াও কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে আবার কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় এবার ঈদে কোরবানির চাহিদা ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫৭০টি পশু। স্থানীয় সরকারি পশু চিকিৎকদের সহযোগিতায় এ বছর রংপুর বিভাগের আট জেলায় কোরবানিযোগ্য প্রায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৭৬ হাজার ১২৫টি এবং গরু, মহিষ, বলদ, ষাঁড় ও গাভি ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩৭১টি।

কোরবানিতে দেশি জাতের ও শংকর জাতের গরু চাহিদা বেশি থাকায় খামারিরা এ ধরনের গরু স্বাস্থ্য সম্মতভাবে মোটা তাজাকরণ শুরু করেছেন বছর ধরে।

এদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বেপারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। তবে পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু লালন পালন করতে এবার খরচও হয়েছে অনেক বেশি। সেই কারণে গত বারের তুলনায় এবার পশুর দামও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তালুক শাখাতী গ্রামের ছমির উদ্দিন জানান, গত দেড় বছর ধরে তিনি তার নিজ বাড়িতে একটি ষাঁড় লালন-পালন করছেন। ইতোমধ্যে বেপারি ও ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকিয়েছেন। আরও দাম বৃদ্ধির আশায় তিনি এত তাড়াতাড়ি গরু বিক্রির কথা ভাবছেন না।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মিজানুর রহমান, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের ফজলুল হক, নীলফামারীর জয়নালসহ একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর ধরে দেশের আমিষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন তারা। পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুমে পানিতে মাঠ ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। এজন্য ব্যয়ও বেড়ে যায় অনেক। এরপরেও খামারিরা ঈদকে ঘিরে লাভের আশায় পশু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। তবে ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে পশু আমদানি করা হলে লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

রংপুরের বদরগঞ্জের লোহানী ইউনিয়নের খামারি বদরুল আলম আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, গত এক বছর ধরে তিনি ১০টি গরু তার খামারে লালন-পালন করছেন। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ব্যয় বেড়েছে। ভারত থেকে গরু আমদানি করা হলে দেশি গরুর দাম কমে যেতে পারে। আর এতে করে তিনি লোকসানের মুখে পড়তে পারেন।

রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-পরিচালক মীর ফারুক হোসেন জানান, আসন্ন ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে এবার রংপুর বিভাগে গরুর খামারিরা যে পরিমাণ গরু লালন-পালন করছেন তাতে ঈদে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে পারবেন খামারিরা।

তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম উপায়ে যাতে করে কোনো খামারি গরু মোটাতাজা করতে না পারে সেজন্য আমাদের মাঠকর্মীরা বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৫, ২০১৭)