স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট : হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বহুল আলোচিত চার শিশু হত্যা মামলার রায় আগামীকাল বুধবার ঘোষণা করা হবে।

আজ মঙ্গলবার এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য থাকলেও রায় লেখা শেষ না হওয়ায় বুধবার রায় ঘোষণার তারিখ পুনরায় নির্ধারণ করেন সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মকবুল আহসান।

সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার কর রায় প্রদানের এই তারিখ জাগো নিউজকে জানিয়ে বলেন, গত ২০ জুলাই আলোচিত চার শিশু হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ ২৫ জুলাই এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন। তবে রায় লেখা শেষ না হওয়ায় এক দিন পেছানো হয়েছে।

ফলে হত্যাকাণ্ডের এক বছর আট দিনের মাথায় মামলার ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার এই রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। গত ১৭ জুলাই দেশ-বিদেশে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হয়।

বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০) গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এর ৫ দিনের মাথায় ১৭ জুলাই সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি বালুর ছড়া থেকে মাটির নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তাঁর দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল পড়তো সুন্দ্রাটিকি মাদরাসাতে।

নিখোঁজের পাঁচদিন পর স্থানীয় ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। নিখোঁজের পর মনিরের বাবা আবদাল মিয়া একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে মরদেহ উদ্ধার করা হলে আবদাল মিয়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পরপর সন্দেহভাজন ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বাহুবল থানায় এই চারজনসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।

২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পুলিশ গ্রেফতার করে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আলী বাগাল ও তার দুই ছেলেসহ ছয়জনকে। এর মধ্যে আসামি বাচ্চু মিয়া র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

কারাগারে রয়েছেন, হাবিবুর রহমান আরজু (৪০), শাহেদ (৩২), আব্দুল আলী বাগাল (৬০), তার দুই ছেলে জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া (১৮)। আর উস্তার মিয়া (৪৮), বাবুল মিয়া (৪৫) ও বিল্লাল মিয়া (৩৫) এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে মামলার তদন্তকালে বিষয়টি ও আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ওইদিন মামলার চার্জ গঠন হয়। পরে চলতি বছরের গত ১৫ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের আদেশে মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৫, ২০১৭)