ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর :  ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুইটিকে একদিন তার মা সাজিয়ে-গুজিয়ে বসিয়ে দিলেন কিছু অপরিচিত লোকজনের সামনে। সুইটি তখনও জানে না, কনে দেখানো হচ্ছে।  তার জন্য পাত্রও খুঁজে ফেলা হয়েছে। টের পেতেই আপত্তি বিভার, ‘বিয়ে করব না।’  কেউ যখন তার  কথা শুনতে রাজি নয়’। মেয়ের জেদের  কাজ হয়না। মা-বাবা তাকে বুঝায়-‘এখন যদি বিয়েটা না হয়,-সমাজে আমাদের মুখে থু-খু মারবে। কাল থেকে তোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ। তোর বাবা বিষ খাবে।’ শেষে সুইটিকে পরিবারের কথা, স্কুল বন্ধ হওয়ার কথা ভেবে রাজি হয়।

রাজি হতে হয় সে। মানসিক ব্ল্যাকমেইল যাকে বলে। এমনই একটি ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বাহেরচর গ্রামে। এমনই ঘটনা প্রতিনিয়িত ঘটেই চলেছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে। ১২৫টি গ্রামে।

কাজীদের সাথে এ বিষয়য়ে কথা বললে, পাহাড়িয়াকান্দি ইউপির কাজী মো.নুরজ্জামান বলেন,-‘আমি বিয়ের সময় জন্মসনদ দেখে বিয়ে পড়াই। গত এক সপ্তাহে আমার ইউপিতে ৫টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। আমি বিয়ে পড়াই নি। কিন্তু বিয়ে তো আটকে থাকেনি। স্থানীয় মোল্লারা সেই বিয়েগুলো ঠিকই রেজিঃ বিহীন পড়িয়েছেন।

মোল্লা বা মসজিদের ইমাম সাহেবদের সাথে কথা বললে তারা জানান,-‘কাজী সময় মতো না পাওয়া গেলে এলাকাবাসীর অনুরোধ রাখতে গিয়ে আমরা বিয়ে পড়াতে বাধ্য হই। এছাড়া আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাজীরা মিথ্যে জন্মসনদ চেয়ারম্যান ,মেম্বারদের ধরে বানিয়ে নেয়। নতুবা, মেয়ে পক্ষ তা করেন।

চেয়ারম্যানদের বক্তব্য,-‘আমার ভোটার এলাকাবাসী এসে বলেন আমার মেয়ের বয়স ১৮ হয়েছে। মেয়েকে তো সাথে আনেন না। তাদের কথা বিশ্বাস করে দিতে হয়, জন্মসনদ।

জানা গেছে, মেয়ের বয়স কম হলেই কাজী বা মৌলভী সাহেবের জন্য পোয়াবারো।তারা বিয়ের রেটের চেয়ে নূন্যতম ১০গুন বেশী ফী আদায় করে বিয়ে পড়িয়ে পান চিবুতে চিবুতে হাটতে থাকেন।
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

(এফএকে/এসপি/জুলাই ২৬, ২০১৭)