আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া গ্রামে তে মাত্র ৩৫ টাকার জন্য ১০ বছর বয়সী  নিজ শিশু কন্যা হিরাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড পিতা। এ ঘটনায় মধুখালী থানা পুলিশ পিতা হারুন শেখকে আটক করেছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন শেখ নিজ হাতে হিরাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে নিজ কন্যাকে হত্যার পর শিশু হিরার লাশটি হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায় হারুন শেখ। এ ঘটনায় নিহতের নানা লিয়াকত শেখ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লক্ষণদিয়া গ্রামের ভ্যান চালক হারুন শেখ তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও প্রথম পক্ষের দু’সন্তান হিরা ও শোয়াইবকে নিয়ে বসবাস করতেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হারুন শেখের মেয়ে স্থানীয় ভুষনা লক্ষনদিয়া প্রাইমারী স্কুলের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী হিরা তার বাবার পকেট থেকে না বলে ৩৫ টাকা নেয়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে হারুন শেখ টাকা চুরির অপরাধে হিরাকে বেদম মারপিট করে। একপর্যায়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। পরে হিরার লাশটি মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে সে পালিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ শিশু হিরার লাশটি থানায় নিয়ে আসে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে মধুখালী পৌর এলাকা থেকে ঘাতক হারুন শেখকে আটক করা হয়।

থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা হারুন শেখ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার মেয়ে মাঝে মধ্যেই পকেট থেকে টাকা চুরি করতো। সেদিন তার পকেট থেকে ৩৫ টাকা চুরি করে। বাসায় আসার পর মেয়েকে টাকা চুরির কথা বললে সে অস্বীকার করে। রাগের মাথায় সে মেয়েকে পিটিয়ে এবং পরে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশটি ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রাখতে গেলে লোকজন এসে পড়ায় সে পালিয়ে যায়।

বাবা কিভাবে তার বড় বোনকে হত্যা করেছে পুলিশের কাছে তার সাক্ষি দিয়েছেন ছেলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হারুন শেখের ছোট ছেলে শোয়াইব (৭)। শোয়াইব জানায়, বাবা বাসায় এসে আমাকে ও বোনকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। পরে বোনকে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলে। আমি অনেক কান্না করলেও বাবা বোনকে মেরে ফেলে। ঘটনার সময় হারুন শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী বাসায় থাকলেও সে অন্য ঘরে কাজ করছিল বলে জানায়। হারুন শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী মানসিক প্রতিবন্ধী বলে জানায় স্থানীয়রা।

নওপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডেও মেম্বার ও ভুষনা লক্ষনদিয়া প্রাইমারী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। মাত্র ৩৫ টাকার জন্য ফুটফুটে একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করা কোন মতেই মেনে নেয়া যায়না। এ ঘটনায় বাবা হারুন শেখের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিকরেন তিনি। শিশু কন্যাকে হত্যার অভিযোগে হিরার নানা লিয়াকত শেখ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই হারুন শেখকে আসামী করে মধুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রুহুল আমিন জানিয়েছেন, মেয়েকে হত্যার অভিযোগে আটক হারুন শেখের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

(এফএ/এএস/জুলাই ২৮, ২০১৭)