দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান পদ্মার বুকে জেড়ে ওঠা অন্ধকার এক জনপদের নাম কুশাহাটা। জেগে ওঠা এ চরে ১২০টি পরিবারে সহস্রাধিক মানুষের বসতি। চরাচঞ্চলের এই মানুষগুলো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখানে শত শত শিশু বেড়ে ওঠছে শিক্ষার আলো ছাড়াই।

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট হতে উত্তাল পদ্মার মাঝ দিয়ে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মার এই চরের নামই কুশাহাটা। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চিকিৎসা-সেনিটেশন-বিশুদ্ধ পানি সহ সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত এ চরাঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিনে প্রতিবেদন সংগ্রহের সময় জানা যায়, এখানে এক সময় সবই ছিল। ছোট্ট শিশুরা বিদ্যালয়ে যেত কিন্তু ২১ বছর পূর্বে পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়ে যায় কুশাহাটা। তখন এই জনপদের বাসিন্দারা মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার কানাইদিয়া চরে বসতি স্থাপন করে। সেখানেই ভোটার তালিকায় নাম লিপিবন্ধ করে চরাঞ্চলের এই মানুষগুলো। ২০১১ সালে জেগে ওঠে কুশাহাটা। ২০১৪ সালে আবার বসতি স্থাপন করে চরাঞ্চলের এই মানুষগুলো। পৈতিক ভিটায় ছোট্ট ছোট্ট টিনের ঘরে বসতি স্থাপন করে আবার জীবন সংগ্রাম শুরু করে চরাঞ্চলের এই মানুষগুলো। গবাদী পশু পালন, কৃষি কাজ এবং মাছ স্বীকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে এরা।

আব্দুল খালেক জানান, আমারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাহায্যের জন মানিকগঞ্জে গেলে তারা বলে তোমরা রাজবাড়ীর মানুষ আর রাজবাড়ী গেলে তারা বলে তোমাদের বরাদ্দ মানিকঞ্জের নামে আসে। লুৎফর রহমান জানান, এখানে একটা বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন। এখানে ২ শতাধিক ছেলে-মেয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে যে এন জি ও গুলো আছে সেগুলো এখানে কোন সেবা প্রদান করে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রথম সাড়ির একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জেলা প্রতিনিধি জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা ঢাকাতে চিঠি লিখেছি।

এধরনের প্রতিবেদন তুলে আনার জন্য সাংবাদিকদের প্রশংসা করেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী। তিনি প্রতিবেদকের সামনেই গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিবকে দুর্গম চরে একটি বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থার জন্য দ্রুত তাগিদ দেন। তিনি আরো জানান চরাঞ্চলের এই মানুষগুলোর সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে। তিনি আরো জানান চরাঞ্চলের এই জনপদকে বাইরে রেখে আমাদের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

(ডিবি/এএস/জুলাই ২৮, ২০১৭)