রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের দেউলিয়াবাড়ি এলাকায় বুধবার স্কুলছাত্রী দুই বোন ভাবনা আক্তার ও লুবনা আক্তার খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেছে তাদের পিতা মো. শামীম হোসেন। এই খুনের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মো. ওয়ারেছ আলী ও বিলাশ মিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।

জানা গেছে, খুনের ঘটনা জানতে পেরে নিহতের পিতা মো. কামীম হোসেন মালয়েশিয়া থেকে বুধবার রাতেই ঢাকায় আসেন এবং বৃহস্পতিবার ভোরে গ্রামের বাড়ি দেউলিয়াবাড়িতে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সকালে তিনি জামালপুর সদর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে তার দুই মেয়ে খুনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।

শামীম হোসেনের বাড়িতে বুধবার ভোরে তার দুই মেয়ে ভাবনা আক্তার (১৪) ও লুবনা আক্তারকে (১০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে মেঝেতে লাশ ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার আগের দিন মা তাসলিমা বেগম আড়াই বছরের এক কন্যাকে নিয়ে জামালপুর শহরের বাগেরহাটায় তার বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন। বুধবার সকাল আটটার দিকে তাছলিমা বেগম জামালপুর শহর থেকে তাদের বাড়িতে গিয়ে ঘরের স্টিল-লোহার দরজা ভেতর থেকে খোলা অবস্থায় দেখতে পান। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই তিনি মেঝেতে তার দুই মেয়ের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ দেখেই চিৎকার দেন। এ ঘটনা জানতে পেরে মালয়েশিয়া থেকে তার স্বামী শামীম হোসাইন রাতেই বিমানযোগে দেশে আসেন। এ দিকে পুলিশ এখনও পর্যন্ত এই জোড়া খুনের ঘটনার কোনো কারণ উৎঘাটন করতে পারেনি।

এই হত্যা ঘটনায় পিতা শামীম হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় একই উদ্দেশে খুন করার অপরাধের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে নৃশংস এই খুনের ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মামলার বাদীর চাচা মো. ওয়ারেছ আলী ও চাচাত ভাই বিলাশ মিয়াকে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।

সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, এই জোড়া খুনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জামালপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নূরে আলমকে প্রধান এবং গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম ও জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাশেদুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রসঙ্গে জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রাশেদুল হাসান বলেন, মামলায় বাদী কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেন নি। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ঘটনার দিনই আটক বাদীর নিকটাত্মীয় মো. ওয়ারেছ আলী ও বিলাশ মিয়াকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওনক জাহান বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় তার কার্যালয়ে এই জোড়া খুনের প্রসঙ্গে প্রেসব্রিফিং করে সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি জঘন্য বর্বরোচিত ঘটনা। দুই বোনকে খুনের ঘটনার পর ভেতর থেকে দরজা খোলা পাওয়া যাওয়ায় মনে হচ্ছে তাদের নিকটাত্মীয় বা পূর্ব পরিচিত কেউ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। গৃহকর্ত্রী তাছলিমা বেগমের স্বামী বিদেশে থাকেন। তাছলিমা বেগমের পরকীয়া প্রেমের কথাও আমাদের কানে এসেছে। তার মেয়ে ভাবনা আক্তারকে উত্যক্ত করার ঘটনাও রয়েছে। জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধেরও কিছু ঘটনাও শুনছি। এসব মাথায় রেখেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

(আরআর/এএস/আগস্ট ০৩, ২০১৭)