ফিচার ডেস্ক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর লেখা এ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে প্রায় ১৩ শতাধিক মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। একজন নেতার ওপর পৃথিবীর আর কোন দেশে এতো বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশ হয়নি বলে লেখক-প্রকাশকরা জানান। তারা জানান, বইগুলো বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ওপর কিছু বই চীনা, জাপানি, ইতালি, জার্মানি, সুইডিশসহ কয়েকটি বিদেশি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জি

বাংলা একাডেমি থেকে ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকাশিত আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জি’তে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৯৮ সালে ‘বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু চর্চা’ শিরোনামে আমার যে বইটি প্রকাশ পেয়েছিল, তাতে বঙ্গবন্ধুর ওপর বইয়ের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিনশ’। আর বর্তমান ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ’ বইটিতে (২০১৪ সালে প্রকাশ) এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।’ তার বইটি প্রকাশের পর তিন বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর আরও তিন শতাধিক বই প্রকাশ পেয়েছে বলে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা এবং লেখকরা জানিয়েছেন।



বইয়ের সংখ্যা

‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জি’ বইতে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়, তা ১৬টি শিরোনামে বিভক্ত করা হয়। এরমধ্যে ‘ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ক বই প্রকাশ পেয়েছে ৯টি। ‘আগরতলা মামলা ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়ে সাতটি, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে ১১৭টি, রাজনীতি, প্রশাসন ও পররাষ্ট্রনীতি বিয়ষক ১৭৩টি, ‘স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ’ বিষয়ে ৩২টি, আলোকচিত্র ও দলিলপত্র বিষয়ে ১২৬টি, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ বিষয়ে ১০৪টি, গল্প ও উপন্যাস বিষয়ে ১২২টি, কবিতা ও ছড়া বিষয়ে ৯৮টি, জীবনীগ্রন্থ ১৫১টি, শিশুতোষ গ্রন্থ ৭৮টি, ‘বঙ্গবন্ধুবিরোধীদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে ১৪টি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা যাত্রা, নাটক, সংগীত, গীতি আলেখ্য গ্রন্থ ১১টি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বিষয়ক গ্রন্থ ৮১টি, মূল্যায়নধর্মী গ্রন্থ ৫৫টি এবং দেশি-বিদেশি লেখকের লেখা ইংরেজি ভাষায় ৬৭টি বই প্রকাশ হয়েছে।

প্রকাশনী

বইটির তথ্য অনুযায়ি, দেশের প্রায় তিন শতাধিক প্রকাশনী উল্লেখিত বইগুলো প্রকাশ করেছে। এরমধ্যে বেশিসংখ্যক বই প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি, আগামী প্রকাশনী, ইউপিএল, মওলা ব্রাদার্স, সময় প্রকাশনী, পারিজাত প্রকাশনী, পার্ল, অন্বেষা, অন্য প্রকাশ, হাক্কানী, পাঠক সমাবেশ, বর্ণায়ন, অনুপম, প্রতীক, মীরা প্রকাশনী, জাগৃতি।

এ ছাড়া এক থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বই প্রকাশ করেছে শতাধিক প্রকাশনী। অন্যদিকে ইংরেজি ভাষায় দেশে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ একযোগে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমি ও আগামী প্রকাশনীও ইংরেজি ভাষায় এ সংক্রান্ত বই প্রকাশ করেছে। বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ নয়টি বই প্রকাশ করেছে। বইটি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয়। মীরা প্রকাশনী থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মামলা তদন্ত, ডেথ রেফারেন্স, সওয়াল-জবাব, সাক্ষীদের জেরা ও রায় নিয়েই শুধু আবুল হোসেনের লেখা নয়টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। মীরা থেকে জানানো হয়, তারা বঙ্গবন্ধু বিষয়ে প্রকাশ করেছে বাইশটি বই।



প্রকাশকদের বক্তব্য

প্রকাশকরা জানান, ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুর ওপর গ্রন্থপঞ্জি বইটি প্রকাশের পর গত তিন বছরে বঙ্গবন্ধুর ওপর আরও প্রায় তিন শতাধিক বই প্রকাশ হয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর শুধু মৌলিক বই ১৩ শতাধিক দাঁড়িয়েছে। গত তিনটি একুশে গ্রন্থমেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর অসংখ্য বই প্রকাশ হয়েছে।

আগামী প্রকাশনী বঙ্গবন্ধুর ওপর বিভিন্ন বিষয়ে ৮০টি বই প্রকাশ করেছে। এই প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বলেন, ‘এককভাবে আমরা সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছি। আমরা আশিটি বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে শেখ হাসিনার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইটিসহ কয়েকটি বই বিপুলসংখ্যক বিক্রি হয়েছে।

গণি আরো বলেন, ‘আমাদের জানামতে এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর বইয়ের সংখ্যা হবে তেরোশ’র বেশি। আর কোন দেশের জাতির পিতা-স্থপতির ওপর এতো বই প্রকাশ হয়েছে কি না সন্দেহ। সেদিক থেকে আমরা গর্ব করতে পারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে।’

পারিজাত প্রকাশনীর শওকত হোসেন লিটু জানান, বাঙালি জাতির জন্য এটা সৌভাগ্য যে-বঙ্গবন্ধুর ওপর এতো বই প্রকাশ হয়েছে। এতো বিপুলসংখ্যক বই হয়তো বিশ্বের অন্য কোন নেতার ওপর প্রকাশ হয়নি। তারা পনেরোটি বই প্রকাশ করেছেন বলে জানান।

অব্যাহত থাকবে

প্রতি মাসেই অসংখ্য বই বের হচ্ছে জাতির পিতাকে নিয়ে। বাংলা একাডেমি ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি বলেছে। সেই সময়েই এগারোশ’ প্রকাশ পেয়েছিল। আর গত তিন বছরে বের হয়েছে আড়াইশ’র মতো বই। সংখ্যাটা বর্তমানে তেরশ’র বেশি হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বঙ্গবন্ধুর ওপর আরও গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যায়।

লেখকদের কথা

দেলোয়ার হোসেন তার বইয়ের ভূমিকায় বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ, বাংলা একাডেমি লাইব্রেরি, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি ও বিভিন্ন জেলার লাইব্রেরি এবং কলকাতাসহ কয়েকটি দেশ থেকেও বঙ্গবন্ধুর ওপর বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপরও দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রকাশিত অনেক বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।’

কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ওপর তেরোশ’ বই প্রকাশের খবরটি নিঃসন্দেহে আনন্দের। এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চীনা, জাপানিজ, ইতালি, জার্মানি ও সুইডিশ ভাষায়ও অসংখ্য বই প্রকাশ পেয়েছে। এসব বইয়ের মধ্যে যদি পাঁচশ’ বইও উন্নতমানের হয়ে থাকে, তা বাঙালি জাতির জন্য অনন্য সুখবর। কারণ পৃথিবীর আর কোন নেতাকে নিয়ে এতো বই প্রকাশ হয়নি।’

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পৃথিবীর আর কোন নেতার ওপর এতো বই প্রকাশ পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও বঙ্গবন্ধুর ওপর এতো বই বের হয়েছে, তা তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ পায়। তাঁর জীবন ও কর্মের ওপর অপ্রকাশিত অনেক তথ্য বের হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে বঙ্গবন্ধুর ওপর বই প্রকাশনা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এই আশা করা যায়।’

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১০, ২০১৭)