রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে ট্রেনের ধাক্কায় ৭ ইজিবাইক যাত্রী নিহতের ঘটনায় বিজিবি-চন্দ্রাঘুন্টি রেলক্রসিংয়ের পাশে রেলের জায়গা দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও রেল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এই উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনির নেতৃত্বে জামালপুর পৌরসভা, জামালপুর রেলওয়ের উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) রেজাউল হকের নেতৃত্বে রেলওয়ের টিম। ক্রসিংটিতে ১০২ ফিট রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা দোকানপাট, হোটেল, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, কোচিং সেন্টারসহ প্রায় ৪০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে অভিযানকারী দল। গেটব্যারিয়ার ও গেটম্যান না থাকায় বিজিবি-চন্দ্রাঘুন্টির চারপাশ জুড়ে অবৈধ স্থাপনায় আড়াল হয়ে গেছে রেললাইন। ফলে যানবহনের ড্রাইভাররা ট্রেন দেখতে না পেয়ে ক্রসিংয়ে যানবহন তুলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রায়ই। ঝুকিপূর্ণ এই ক্রসিংয়ে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটলেও রেল কর্তৃপক্ষ এতদিন ছিল নীরব। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ৭জনের মৃত্যু হলে টনক নড়ে রেলকর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের।

এ ব্যাপারে জামালপুর রেলওয়ে জংশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরবার হোসেন মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনায় ৭জন নিহতের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় ও দলীয় প্রভাবে অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব হয় না। চন্দ্রাঘুন্টি রেলক্রসিংয়ে রেলের জায়গায় সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। এর চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ শহরের বটতলা রেলক্রসিংসহ সকল রেলক্রসিংয়ের আশপাশে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো দুর্ঘটনা মুক্ত রাখতে গেটব্যারিয়ার স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগে পদক্ষেপ নিবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো বলেন, রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যা তুলে ধরে গেটব্যরিয়ার স্থাপন ও গেটম্যান নিয়োগের চাহিদাপত্র একাধিক বার পাঠানো হয়েছে। আইনি জটিলতায় প্রক্রিয়াধীন বিষয়টি ঝুলে থাকায় গেটব্যারিয়ার স্থাপন শুরু করেও বন্ধ রাখা হয়েছে এবং গেটম্যান নিয়োগ হচ্ছে না। রেল দুর্ঘটনায় ৭ ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা ঢাকা’র রেজাউল হককে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।

জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিন বলেন, রেলের ধাক্কায় মর্মান্তিক ৭জন নিহতের দুর্ঘটনাস্থল বিজিবি-চন্দ্রা রেলক্রসিংয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং বটতলাসহ জেলার সকল অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে পর্যায়ক্রমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। অবৈধ দখলকারীদের নোটিশ দেওয়া হবে, নিজে থেকে স্থাপনা না সরালে অর্থ জরিমানাসহ উচ্ছেদ করা হবে।

উল্লেখ্য, বুধবার বিকালে জামালপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটি বিজিবি-চন্দ্রাঘুন্টি রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় যাত্রীবাহী একটি ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই ছানোয়ার হোসেন নামে সদর থানার ঝাড়–দার নিহত হয়।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ইজিবাইক চালক আব্দুর রহিম, যাত্রী মীর হোসেন ও ইন্তাজ আলী এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে হোসেন আলী তার ভাতিজা ফরিদুল ও ছালেহা বেগম মারা যান।

(আরআর/এএস/আগস্ট ১০, ২০১৭)