জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) মানোন্নয়ন পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর না দেয়া এবং ‘বি প্লাস’ (জিপিএ ৩.২৫) এর বেশি নম্বর পেলেও তা মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একাডেমিক কাউন্সিলের ৪১তম সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, মেধার মূল্যায়ন নয় বরং ধ্বংস করা হচ্ছে।

জবি প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, জবির নতুন একাডেমিক নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী মানোন্নয়ন পরীক্ষা বা পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে ‘বি প্লাস’ অর্থাৎ জিপিএ ৩.২৫ এর বেশি পাবেন না। মানোন্নয়ন পরীক্ষায় জিপিএ ৪ পেলেও ৩.২৫ এর বেশি দেয়া হবে না। গত ৭ অাগস্ট (সোমবার) একাডেমিক কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স থেকে কার্যকর হবে। তবে স্নাতক পর্যায়ে কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। তারা বলছেন, মানোন্নয়ন পরীক্ষাই দেয়া হয় নম্বর বাড়ানোর জন্য। একজন শিক্ষার্থী কোনো কারণে কোনো বিষয়ে খারাপ করলে মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা পূরণ করার সুযোগ থাকে। তবে নতুন এ সিদ্ধান্তে মেধার মূল্যায়ন নয় বরং মেধা ধ্বংস করা হচ্ছে।

বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, আর্থিক বা অন্য যে কোনো সমস্যায় পড়তে পারে। তাছাড়া যে প্রশ্নে নিয়মিত ব্যাচের সবাই পরীক্ষা দেবে সেই প্রশ্নে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিলে শিক্ষার্থীকে জিপিএ ৩.২৫ এর বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।

তিনি আরও বলেন, চলমান সেমিস্টারের সঙ্গে মিল রেখে মানোন্নয়নের জন্য পড়াশোনা করে কোনো শিক্ষার্থী ভালো করতে পারলে কেন তাকে সর্বোচ্চ জিপিএ দেয়া হবে না? মেধা ধ্বংসকারী এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীই রাতদিন শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করবে তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন। এ সকল শিক্ষার্থীরাই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণতা দান করে। আর সৃজনশীল কাজের জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া কেউ শারীরিক অসুস্থ, কেউবা পারিবারিক সমস্যায় অনেক সময় সামর্থ্য অনুযায়ী ফল করতে পারেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নিয়ম করা হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। এ সিদ্ধান্ত সৃজনশীলতার পথে অন্তরায় এবং স্বৈরাচারী মূলক। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে শিক্ষার্থীরা এই অন্যায় সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।

এ বিষয়ে একাডেমিক সভার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, আমরা এ নিয়মটি করেছি যাতে কোনো অনিয়মিত শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে না পারে। এ নিয়মের আগে যে কেউ পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য রেখে দেয়। এতে সে অনেক বেশি সময় নিয়ে ভালো ফলাফল করতে পারে। তাই এ নিয়মটি করা হয়েছে। যাতে কোনো অনিয়মিত শিক্ষার্থী নিয়মিত শিক্ষার্থীর চেয়ে ভালো ফলাফল করতে না পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৭-১৮ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা আমরা বলেছি। এটা এখন একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটে পাস হয়নি।’

কমিটির সদস্য সচিব একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, মানোন্নয়নের নির্দিষ্ট মান রেখে একটি নিয়ম গত একাডেমিক মিটিংয়ে পাস করেছি। সেখানে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স থেকে কার্যকর হবে, তবে অনার্সে কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পরবর্তী মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তবে রসায়ন বিভাগের সম্মান শ্রেণির সাম্প্রতিক এক ফলে নতুন এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগের একটি ফলাফলে এটি কার্যকর করা হয়েছে, তবে এটা সংশোধন যোগ্য। যেহেতু এটা এখনো কার্যকর হয়নি। তাই এ রকম হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, নতুন এ সিদ্ধান্তটি গত ৪১তম একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়েছে। তবে আমি এখনো কোনো বিভাগে নোটিশ পাঠাইনি।

রসায়ন বিভাগের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১১, ২০১৭)