রাজন্য রুহানি, জামালপুর : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে জামালপুরের নিন্মাঞ্চলসমূহ। টানা বর্ষণে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে শহর ও গ্রামের পথগুলো। বাড়ির আঙিনায় ফের ঢুকে গেছে পানি। সব মিলিয়ে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে।

যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৮৭ সেন্টিমিটারে উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অকস্মাৎ বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যমুনাপাড়ের মানুষজন। আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ভেসে গেছে গোলার ধান, নানা খাদ্যসামগ্রীসহ গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। ঘরের জিনিসপত্রও সরাতে পারেনি অনেকেই। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে পানিবন্দি মানুষেরা।

সবচেয়ে বেশি বন্যাদুর্গত উপজেলা যমুনা পাড়ের ইসলামপুর। এ উপজেলায় বন্যার পানি দ্রুত গতিতে বাড়ায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সাথে সাতটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ। তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সাপধরী ইউনিয়নের চেঙানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যে কোনো মুহুর্তে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে চেঙানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম বলিয়াদহ ও শিংভাঙা গ্রামে বন্যার পানিতে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছে লোকজন। রাস্তার ধারে মাথা গুঁজার ঠাঁই নিয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষ। এদের অবস্থা বেশ করুণ। খাবার সংকট ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দেওয়ায় দেখা দিয়েছে রোগবালাই। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে।

এদিকে গুঠাইল বাজার, সোনামুখি, আমতলী বাজার, বামনা, ডেবরাইপ্যাচ, শিংভাঙ্গা, উলিয়া, রাস্তাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার সাথে পশ্চিমাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে বন্যা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নই।

বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ দেখা দেওয়ায় উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ৬৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেলগাছা চেয়ারম্যান আ. মালেক জানান, পানি বাড়ায় ফের নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে বরুল, মুন্নিয়াচর, মুন্নিয়া নদী। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পশ্চিম বেলগাছা মন্নিয়া ও বরুল এলাকার মানুষজন।

সাপধরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবদীন জানান, আমার এলাকা নদী ভাঙনের ফলে চেঙানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাশারীডোবা, শিলদহ, সিন্দুরতলী ও বিশরশির মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।

চিনাডুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. গোলাম জানান, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় তলিয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় তুলনায় ত্রাণ নেই, মানুষেরা হাহাকার করছে। পার্থশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার বাবুল জানান, মলমগঞ্জ হতে জারুলতলা রাস্তাটি তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত বিভিন্ন আশ্রয়ণে গিয়ে গবাদি পশুর টিকা, ভেকসিন দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা বুঝে আমাদের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। এদিকে জামালপুর জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানিবন্দি মানুষজনদের ত্রাণ দিয়েছেন।

ইসলামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ২০ মেট্টিক টন ত্রাণের চাল, নগদ ২০ হাজার টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পেয়ে চিনাডুলী, বেলগাছা, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, পাথর্শী, কুলকান্দি ইউনিয়নে ২ হাজার পরিবারে মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম এহছানুর মামুন জানান, হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যার্তদের। প্রশাসন সজাগ রয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


(আরআর/এসপি/আগস্ট ১৩, ২০১৭)