নিউজ ডেস্ক : কথাসাহিত্যিক ম্যারিনা নাসরীনের জন্মদিন আজ। যশোর জেলার কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে বাংলা ১৩৭৯ সনের ১লা ভাদ্র, ১৯৭৩ সনের ১৬ আগস্ট মাসের রোদেলা সকালে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারিনা। ম্যারিনা নাসরীনের শৈশব কেটেছে সাগরদাঁড়ি গ্রামে। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

বাবা মো. নূরআলী। মা ফাতেমা সুলতানা। বাবা ছিলেন মাইকেল ‘মধুসূদন ইনষ্টিটিউশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। সেই সময়ের উচ্চশিক্ষিত এই মানুষটি প্রচ- শিক্ষা অনুরাগী এবং উদ্যোগী ছিলেন। বাইরের লোভনীয় চাকরির হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি সাগরদাঁড়ি গ্রাম, স্কুল, এবং মহাকবির স্মৃতি রক্ষার কাজে আজীবন নিরলস কাজ করে গিয়েছেন।

ম্যারিনা নাসরীনের মা মাগুরার এক সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে। অত্যন্ত আধুনিকা এবং মননশীল নারী। এই নারীর আপন ফুপু ‘বনানী চৌধুরী’ যিনি প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী অভিনেত্রী। মায়ের মননশীলতার ছাপ ম্যারিনা নাসরীনের মধ্যে সুস্পষ্ট।

ম্যারিনা নাসরীন সাগরদাঁড়িতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে যশোর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সমাপন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কমর্রত আছেন।

স্কুল জীবনে ছড়া, কবিতা লেখার মাধ্যমে তাঁর লেখালেখিতে জগতে প্রবেশ। সে সময়ে খুলনা বেতার কেন্দ্রে তাঁর কয়েকটি কবিতা প্রচারিত হয়। এরপর দীর্ঘবিরতি শেষে আবার লেখালেখির জগতে ফিরে আসেন ২০১০ সালে। প্রথমত অনলাইন মাধ্যমে তাঁর গদ্য লেখার শুরু। অন্যপ্রকাশ পরিচালিত ‘গল্পকবিতা ডটকম’ নামক অনলাইন সাহিত্য সাইটে তাঁর গল্প ‘ক্ষত’ এবং ‘শবমিছিল’ প্রথম পুরষ্কার লাভ করে। এরপর থেকেই লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়।

ম্যারিনা নাসরীনের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘একটি প্রশ্নবিদ্ধ জন্ম’ নন্দিতা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে বইমেলায়। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা মোট ছয়টি। চারটি গল্পগ্রন্থ, দুটি উপন্যাস। প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জল ঘুঙুর’। ’৭১ উপন্যাস’ সিরিজের এই উপন্যাসটি ২০১৬ সালের বইমেলায় প্রকাশ করেছে ‘বেহুলা বাংলা’ প্রকাশনী। উপন্যাসটি যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। এটি ছিল বেহুলা বাংলার সর্বাধিক বিক্রয়কৃত গ্রন্থ। বইমেলা ২০১৭ তে ‘পরিবার পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রেমের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ফিনিক্সের ডানা’ এবং ‘কথাপ্রকাশ’ প্রকাশ করেছে ম্যারিনা নাসরীনের চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘মৃত্যুঞ্জয় ঘাট’।

ম্যারিনা নাসরীন বিভিন্ন দৈনিক, অনলাইন, ম্যাগাজিন এবং লিটল ম্যাগে নিয়মিত লিখছেন। গল্প উপন্যাস ছাড়াও তিনি ভ্রমণ কাহিনী, সাম্প্রতিক নানা সংগতি অসঙ্গতি নিয়ে ফিচার, কলাম, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি লিখে ইতোমধ্যে পাঠকের নজরে এসেছেন। ম্যারিনা নাসরীন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি প্রিয় নাম। এই মাধ্যমে তাঁর লেখা জীবনের ছোট ছোট অনুভূতি, স্যাটায়ার অনেকেরই প্রিয়।

ব্যক্তিগত জীবনে সদাহাস্যময়ী এই লেখকের স্বামী মো. ইউছুফ আলী একজন সরকারি কর্মকর্তা। দুই সন্তান, নাফিস তিহাম এবং মাহির আবরারকে নিয়ে তাঁর পরিবার।
ম্যারিনা নাসরীনের প্রিয় লেখকের তালিকা দীর্ঘ তবে বেশি ভাললাগার তালিকায় রয়েছেন আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, শহিদুল্লাহ জহির, গ্যাব্রিয়েলা গার্সিয়া মার্কেজ, কাফকাসহ আরও অনেকে। সর্বাধিকবার পঠিত এবং প্রিয় গ্রন্থ ‘শার্লক হোমস অমনিবাস’।

তাঁর পছন্দের রঙ লাল। প্রিয় ফুল মাধবীলতা। গান শুনতে পছন্দ করেন খুব। জন্মদিন কিভাবে কাটাবেন জানতে চাইলে ভীষণ ইমোশনাল ম্যারিনা বলেন, ‘একা, ময়মনসিংহের একটি ঘরে।’ কারণ চাকরির কারণে এইদিন তিনি পরিবার থেকে দূরে ময়মনসিংহে শহরে অবস্থান করবেন।

প্রতিভাবান এই লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে জয় করুক সব পাঠকের মন। বাংলা সাহিত্যে তাঁর পথচলা হোক সুদীর্ঘ। অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ম্যারিনা নাসরীন জন্য।