বাকৃবি প্রতিনিধি : প্রথম উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার পথিকৃৎ ও সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ৫৬ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫৭তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

এদেশ উর্বর জমি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও দুর্ভিক্ষ ছিল নিত্যসঙ্গী। জাতীয় খাদ্য ও কৃষি কমিশন এবং শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৬১ সালের এ দিনে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্পূর্ণ আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি ইনস্টিটিউট, ৬টি অনুষদ ও ৪৪টি বিভাগ রয়েছে।

সম্প্রতি জুলাই ২০১৭ সংস্করণে বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত ওয়েবমেট্রিক্সে র‌্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিসে বাংলাদেশের সেরা হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

স্পেনের জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের করা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ এর অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ অবস্থান দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং তৃতীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাকৃবি এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার দক্ষ কৃষিবিদ তৈরি করেছে। এরমধ্যে জাপান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকা এবং নেপালের শিক্ষার্থী প্রায় ১২৫ জন।

গৌরবের বিষয়সমূহ-

জার্মপ্লাজম সেন্টার : উদ্ভিদের অন্যন্যা সংগ্রহশালা, এটি গবেষণায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং আয়তনে দ্বিতীয়। প্রায় ৩২ একর জায়গায় সাড়ে ১১হাজার ফলের প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠা জার্মপ্লাজম সেন্টারটি গত ২২বছরে ৬৭টি ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে।

কৃষি জাদুঘর : প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এই মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম।

মৎস্য জাদুঘর : ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’ বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণি সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিশ মিউজিয়াম এটি।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি : কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরি। বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার।

প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক : উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই ক্লিনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উদ্ভিদ চিকিৎসালয়।

উল্লেখযোগ্য গবেষণা-

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩২ একর জায়গা গিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎত্তম ফল সংগ্রহশালা বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টারটি এখন পর্যন্ত শত শত দেশি- বিদেশি ফলের বাণিজ্যিক জাত উদ্ভাবন করে দেশের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ বিশেষ অবদান রাখছে। এ পর্যন্ত এখানকার গবেষকরা প্রায় ৮০ জাতের ফল উদ্ভাবন করেছেন।

পশুসম্পদ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির মধ্যে মোরগ-মুরগির রাণিক্ষেত রোগ ও ফাউল পক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, মাংস উৎপাদনকারি ব্রাহমা ক্রস গরু উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, হাঁস-মুরগির সুষম খাদ্য তৈরি, কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের সিমেন সংরক্ষণ, ছাগলের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মৎস্যবিজ্ঞান প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়েছে বাকৃবিতে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা। এর মধ্যে খাঁচায় দেশি কই মাছ চাষ, সুপার মেল তেলাপিয়া, গাঙ মাগুরের কৃত্রিম প্রজনন, পানিতে একই সঙ্গে সবজি ও মাছ চাষ, (একোয়াফনিক্স ও একোয়াজিওফনিক্স), ক্ষত রোগের প্রতিকার নির্ণয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর বলেন, ‘খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ নামে যে ইস্যু বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শোনা যাচ্ছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ রোল মডেল। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক-গ্র্যাজুয়েটদের অক্লান্ত পরিশ্রম এ অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, দেশ থেকে ক্ষুধা মঙ্গার অবসান ঘটেছে। যার ধারাবাহিকতায় বিশ্ব সমাদৃত ওয়েবমেট্রিক্সে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাকৃবি। ভবিষতে বাকৃবি কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় বিগত ৫৫ বছরের গৌরবময় ঐতিহ্য ধরে রেখে বিশ্ব র্যাংকিং এ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০১৭)