দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। গৃহহীন বানভাসি মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কটে ভুগছে।

সরকারি হিসেবে অনুযায়ী প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা। এতে জনপ্রতি ভাগ্যে জুটছে ১ কেজি করে চাল ও ৩ টাকা।

দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত এসব মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৪৮৫ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৫ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৩ হাজার প্যাকেট (চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুট) শুকনা খাবার বন্যাদুর্গত এলাকায় বিতরণ করেছেন।

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দিনাজপুর জেলায় গত শনিবার থেকে শুরু হয় বন্যা। ইতোমধ্যেই দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুর উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা জেলায় পানিবন্দি ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ।

এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাঁধ এলাকায়। জেলার ২ হাজার ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বানভাসি মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বানভাসি মনুষের। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসন ১২৫টি স্বাস্থ্য ক্যাম্প খুলেছে। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আরও ১২০টি চিকিৎসা টিম কাজ করে যাচ্ছে ভানভাসি এলাকায়।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, জেলায় ৩৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেনা সদস্যরা বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের লোকজন ত্রাণ কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত বন্যাজনিত কারণে জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বানভাসি মানুষের আশ্রয়ে দিনাজপুরের ২৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেসব সড়ক ও মহাসড়কের অধিকাংশ স্থান ভেঙে গেছে।

এতে দিনাজপুর জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলাসহ ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় ৬ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে পাবর্তীপুর-পঞ্চগড় রেল যোগাযোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। জেলার অন্যান্য প্রায় ১০টি শাখা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জমি ও বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৭)