লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : বড় শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে হাটুপানি ঝাপিয়ে চলছে। ছোটদের কোলে করে পার করছেন মা-বাবা। এ অবস্থায় চলতে গিয়ে পড়ে জামা-কাপড় ও বইপত্র কাদাপানিতে ভিজে নাকাল অবস্থা। স্থানীয় লোকজনের মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে মাথায় করে। ছাগল-গরু পার করতে কাদাপানিতে নাভিশ্বাস অবস্থা।

একটি রাস্তা দিয়ে চলতে এসব ভোগান্তি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজনের। এটি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। স্থানীয় লোকজন জানান, মাকড়াইল দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অভিমুখী এ রাস্তাটি গত পাঁচ মাস ধরে গভীর করে খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তাটিতে পানি থৈ থৈ করছে। এলাকার লোকজন এ রাস্তায় ঘুনি পেতে মাছ ধরছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা ছিল। মনে হচ্ছে পুরোদস্তুর একটি খাল। এ রাস্তাটির বিকল্প কোনো রাস্তাও নেই। তাই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ পথেই চলতে হয়। আবার এলাকার প্রায় এক শ পরিবারের যাতায়াতের জন্য এটিই একমাত্র পথ। এছাড়া এই পথ ব্যবহার করেই যেতে হয় মাকড়াইল বিল নামে পরিচিত বিশাল ফসলি মাঠে। এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের ফসলি জমি এ মাঠে।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, এলজিইডির আওতায় এক কিলোমিটার পরিমান কাঁচা রাস্তাটি কার্পেটিং করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নড়াইলের মেসার্স জিসান কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে বরাদ্দ ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৬ টাকা। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল গত ৩০ জুন। কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম কাজটি করছেন না। করছেন স্থানীয় লাহুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ঠিকাদার কমর খান। এক কিলোমিটার এ রাস্তাটি খুড়ার পর আধা কিলোমিটার অংশ বালি ভরাট করলেও বাকি আধা কিলোমিটার বালি ভরাট করা হয়নি। এই আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ সকলের।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া, আরিফা, নাহিদ ও সোহানসহ আরো কয়েকজন বলে, একা এ রাস্তায় চলতে ভয় পাই। তাই দলবেঁধে পার হই। তারা প্রশ্ন ছোড়ে, আধা কিলোমিটার রাস্তা এভাবে পানি ও কাঁদাভেঙে আসা যায় ? শিশু শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ময়না খানম বলেন, মেয়েকে কোলে করে স্কুলে দিতে গিয়ে পানি-কাঁদাতে অনেকবার হাবুডুবু খেয়েছি। তাই সবদিন স্কুলে যাওয়া হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হিমায়েত হোসেন জানান, এ অবস্থায় ৩৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা জোবান মোল্লা বলেন, হ্যান্নে পাটের মৌসুম। এ অবস্থায় পাট কাটে মাথায় করে নিতি হচ্ছে। বাজারে মালামালও মাথায় করে নিচ্ছি। ছাগল-গরু বাড়িরতে বাইর করতি পারছি না। রাস্তার জন্যি কি যে দুর্ভোগ তা আমরাই বুঝচ্ছি।

ঠিকাদার তরিকুল ইসলাম বলেন, কাজটি আমি পেয়ে এলাকার ঠিকাদার কমর খানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। লোকজনের ভোগান্তি হচ্ছে তা আমি জানি। বারবার কমরকে তাগাদা দিচ্ছি। শেষে তাঁকে আল্টিমেটাম দিয়েছি, কাজ না করলে আমিই করব।

এ ব্যাপারে কমর খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মুঠোফেনে অনেকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ বলেন, আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম। কার্পেটিং করতে ওই রাস্তা খুড়ে রাখায় এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তাটি না খুড়লে এ দুর্ভোগ হতো না। অনেক চেষ্টা করেও ঠিকাদারকে দিয়ে কোনোভাবেই কাজ করানো যাচ্ছে না। কেন কাজ করছেন না তাও বুঝতে পারছি না। এখন কার্যাদেশ বাতিল করতে হবে।

(আরএম/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৭)