প্রবীর বিকাশ সরকার : জাপানে সারা বছর ধরেই বিভিন্ন জাদুঘরে রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা এবং প্রত্নসম্পদের প্রদর্শনী একটি সাংস্কৃতিক রীতি। এক সপ্তাহ থেকে তিন মাস অবধি প্রদর্শনীর আয়োজন হয়ে থাকে।

জাপানিরা খুব ভ্রমণপিয়াসী। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি বা বিশেষ ছুটির দিনে ঘুরতে বের হন তারা। গৃহবন্দী হয়ে থাকাটা যেন তাদের জন্য মহাক্লান্তিকর। এটা স্বাভাবিকও বটে। কারণ জাপানিরা জন্মগতভাবেই পরিশ্রমী, প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফলে ছুটির দিনে ঘুরেবেড়িয়ে মানসিক ক্লান্তি দূর করতে হয়।
জে আর তথা জাপান রেলওয়ে একটি বিশাল বৈচিত্র্যময় জগৎ। জাপান রেলের দেশও বটে। কত রেল যে এই দেশে আছে বলা কঠিন। রেলগুলো যেমন আরামদায়ক তেমনি নিয়মমেনে চলাই তাদের নীতি। এক মিনিট কোনো কারণে বিলম্ব হলে কতবার যে ক্ষমা চেয়ে ঘোষণা দেন চালক, নিজ কানে না শুনলে বিশ্বাস করাই মুশকিল।
সারা জাপান জুড়ে রেলওয়ে মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে আছে। ফলে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে এক বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে অর্থনৈতিকভাবে। এই দেশে যে কত স্থান আছে ঘুরেবেড়ানোর জন্য তার হিসেব নেই। ফলে ভ্রমণপিয়াসী জাপানিদের জন্য প্যাকেজ ট্যুরের যেমন ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে আবার বিভিন্ন পর্যটন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিকল্পনাও করে থাকে। প্রতিটি ছোটবড় রেল স্টেশনে রয়েছে পর্যটনের বড় বড় বহুরঙা পোস্টার, প্রচারপত্র এবং বুলেটিন। বড় বড় স্টেশনে রয়েছে পর্যটন কোম্পানির অফিস। অভ্যন্তরীণ পর্যটনশিল্প জাপানের একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি।
জাপানিদের শৈল্পিক জ্ঞান ও গুণাগুণ অনন্য। রবীন্দ্রনাথ তাদের শিল্পকলার জ্ঞান ও সৃজনশীলতার প্রশংসা করেছেন একাধিকবার জাপানে প্রদত্ত তার বক্তৃতাগুলোতে। ঐতিহাসিক শিল্পকলা, প্রতিমাকলা এবং প্রত্ননিদর্শনের প্রদর্শীতে জাপানিদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। ছবিতে মেট্রো রেলের ভেতরে একটি বিজ্ঞাপন ঝুলানো রয়েছে এটা বৌদ্ধ মহাভিক্ষু কুওকাই বা কুওবোও দাইশি এবং মিক্কিয়োও বা তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের শিল্পকলা সম্পর্কিত একটি প্রদর্শনীর প্রচারণা।
কুওকাই ছিলেন (৭৭৪-৮৩৫) একাধারে প্রাচীন জাপানের একজন মহাবৌদ্ধপণ্ডিত, কবি, চিত্রকর, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা এবং দুর্বোধ্য তান্ত্রিক বৌদ্ধ সম্প্রদায় শিনগোনশুউ (যথার্থ বিশ্ব) এর প্রতিষ্ঠাতা। এই সম্প্রদায় অত্যন্ত প্রভাবশালী।
আমরা অনেকেই জানি না যে, গুহ্যধর্ম বা তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের জন্ম অবিভক্ত বাংলায় তারপর সেটা ছড়িয়েছে তিব্বতে এবং চীনে। বাংলা অঞ্চল থেকে এই ধর্মটি বহু আগেই তিরোহিত হয়েছে। স্থান নিয়েছে জাপানে। এই দেশে বহাল তবিয়তে তান্ত্রিক ধর্ম পালিত হচ্ছে কোটি কোটি মানুষের দ্বারা। যে ভারতে মহান বৌদ্ধধর্মের উত্থান সেখান থেকে তাকে বিতাড়িত হয়ে সে এখন মহামহিমায় জাপানে অধিষ্ঠিত এবং আলোকিত।

লেখক : জাপান প্রবাসী