সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার বন্যাকবলিতরা সাপের ভয়ে ঘুমাতে পারছেন না। সারারাত সাপ আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে তাদের। গত ৬ দিনের ব্যবধানে চৌহালী ও তাড়াশে সাপের কামড়ে এক নারী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে।

এদিকে বন্যায় ভারতীয় সীমান্ত থেকে বিষধর প্রচুর সংখ্যক সাপ যমুনা নদী দিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় ঢুকে পড়েছে। বিচরণকারী সাপের মধ্যে ঢোঁড়া ও গোখরা সাপের প্রাদুর্ভাব বেশি। সাপের ভয়ে অনেক জায়গায় জেলেরা পানিতে মাছ ধরতেও সাহস পাচ্ছেন না।

গত মঙ্গলবার ভোরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের কান্দা ঘোরজান গ্রামে সাপের ছোবলে কদবানু (৫২) নামের এক নারী ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের সাকোয়াদীঘি গ্রামে সিয়াম হোসেন (৮) নামে এক শিশু মারা যায়।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জেলার বন্যাকবলিত ৫টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় তিনশ গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ মানুষই পাউবোর বাঁধ, উচু রাস্তাঘাট ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং এক হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘোরজান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, বন্যাকবলিত কদবানু তার পরিবারসহ রাতে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। এসময় বন্যার পানিতে ভেসে আসা বিষধর সাপ তাকে ছোবল দেয়। চারদিকে বন্যার পানি থাকায় রাতে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে মঙ্গলবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। সাপের কামড়ে ওই নারীর মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে ভাঙনকবলিত চৌহালী উপজেলার বানভাসীদের মধ্যে সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

তাড়াশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সহকারী মাসুদ রানা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সাকোয়াদীঘি গ্রামের জিয়াউর রহমানের পুকুর বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। জিয়াউর ও তার ছেলে সিয়াম পুকুরপাড় জাল দিয়ে বেড়া দেয়ার সময় শিশু সিয়ামকে ভেসে আসা সাপ কামড় দেয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। এ ঘটনার পর থেকেই চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ অঞ্চলেও সাপ আতঙ্ক দেখা দেয়।

সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রামে বাঁধে আশ্রায় নেয়া জয়গুন নেছা বলেন, ‘স্বামীসহ দুই সন্তানকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে হাঁটু পানিতে বসবাস করছি। সারারাত সাপ আতঙ্কে ঘুমাতে পারি না। কখন যেন সাপ এসে কামড় দেয় এই ভয়ে ঘুম আসে না।’

সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের চরের বানভাসী মোবারক আলী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সাপের আতঙ্কে সন্তানদের নিয়ে রাত পার করছি। ঘরে এসে সাপ কোথাও ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করছে কি না এই আতঙ্কে আছি। সাপের দংশন এড়াতে কী করণীয়, সেটাও তো ঠিকমতো জানি না।’

একই এলাকার ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুরভী আক্তার বলেন,‘আমরা সাপের ভয়ে আছি। ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। গোসল করতেও ভয় কখন যেন সাপ এসে কামড় দেয়।’

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মনজুর রহমান জানান, দেশের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানি ছড়িয়ে থাকায় বিষধর সাপও উষ্ণ স্থানে অবস্থানের চেষ্টা করছে। আর এতে দেখা যাচ্ছে বন্যাকবলিতদের আশ্রয়স্থলেই সাপের উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে। ফলে সারারাত সাপ আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে তাদের।

তিনি আরও জানান, সাপের উপদ্রব এড়াতে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনকে সাবধানে থাকার জন্য সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসা সেবায় উপজেলার হাসপাতাল এবং ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম তৎপর রয়েছে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২০, ২০১৭)