রাজন্য রুহানি, জামালপুর : চলতি বন্যায় ১১ ধরে পানিবন্দি মানুষ খাবারের অভাবে ত্রাণের জন্য ছুটছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পিছুপিছু। চাহিদার তুলনায় বরাদ্ধকৃত ত্রাণ অপ্রতুল বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী বানভাসীরা। এই মানবিক বিপর্যয়ে কাছে পাচ্ছেনা জনপ্রতিনিধিদের। ত্রাণ বিতরণেও অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগ তুলেছে ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের পূর্ব বলিয়াদহ গ্রামের ৬০ বছর বয়সি সুরুজ মিয়া।

তিনি বলেন, খাইয়া না খাইয়া আছি, এহন পর্যন্ত কোন ইলিপ পাইলেম না। চেরম্যান মেম্বর খালি তাগো বাড়ীর সাথের মানুষগড়ের মাইগ-পুলাপান, আত্বীয়-স্বজন ও তাগো হাতকরা চেলাচামুন্ডাগরে ইলিপের নিষ্টিতে নাম তুলে। ওরাই সিলিপ পায়। সালাম ইলেকশনে চেরম্যান অবার পর কয়েকবারের বানে পুর্ব ও পশ্চিম বলিয়াদহে ইলিপ দিবার আহে নাই। ইলিপ চাইলে কয় তোরা তো আমারে ভোট দেস নাই, ইলিপ দিমু কিবেই? এমনই অভিযোগ তুললেন ওই এলাকার দুলাল উদ্দিন (৪৫), রাশেদ মিয়া (৩০) ও ৫৫ বছর বয়সী রসিদ শেখ। এ বিষয়ে চিনাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তারা হয়তো আমাকে পছন্দ করে না কিংবা আমাকে হেয় করার জন্য এসব কথা বলেছে।

পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসীদের। অনেকেই এই দুর্যোগে বাঁচা-মরার লড়াই করে যাচ্ছে। যমুনাপাড়ের দুর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। যেটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে তাতে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও ভুভুক্ষু লোকজনের অধিকাংশই বাদ পড়েছে।

একদিকে খাদ্য সংকট অপরদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যার পানি পান করে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে জামালপুরের বন্যাকবলিত ৭টি উপজেলায় ৭৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বিভিন্ন উপজেলার আশেপাশে মেডিকেল টিম কাজ করলেও দুর্গম এলাকাগুলোতে যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের বামনা গ্রামের রবিজল শেখ। তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী জিনেতন বেগম (২২) ১৭ আগস্ট বিনাচিকিৎসায় মারা যায়। এমন অভিযোগ ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি, পাথর্শী ও কুলকান্দি ইউনিয়নের দুর্গত এলাকার অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত পানিবন্দি মানুষজনের।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন মোশায়ের-উল ইসলাম জানান, দুর্গম এলাকাগুলোতে পানিবন্দি মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে মেডিকেল টিম পাঠানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকায় ১ হাজার ৩৪৮ মেট্রিকটন চাল, ৩৬ লাখ ২৫ হাজার নগদ টাকা ও ২১ হাজার ৯’শ ৭০ প্যাকেট গুড়সহ শুকনো রুটি ও ২৫০ কেজি চিড়া বিতরণ করা হয়েছে।

তবে বন্যাকবলিতরা দাবি করেছে, পানিবন্দি ৮ লাখ মানুষের মধ্যে বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী এতই অপ্রতুল যে মাথাপিছু ১ ছটাক চাল ও নগদ ২ টাকাও ভাগে পড়েনি।

(আরআর/এএস/আগস্ট ২০, ২০১৭)