ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ‘আমরা গর্বিত যে, লেখাপড়া শেষ করে নিজের দেশের পাওয়ার প্লান্টে কাজ করার সুযোগ পাব।’ রবিবার দুপুরে ঢাকা হতে ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে এসে রাশিয়ায় নিউক্লিায়ার বিষয়ে অধ্যায়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন।

শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বর্তমান সরকার রাশিয়ায় আমাদের পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হতে সহযোগিতা করেছে। এসময় শিক্ষার্থীরা রাশিয়ান শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা অত্যন্ত আন্তরিক। ভাষাগত কোন বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হলে ক্লাসের বাইরেও তাঁরা আমাদের বোঝানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে রাশিয়ান সহপাঠি বন্ধুদেরও সহযোগিতার জন্য ভূয়সি প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক ভাল ফলাফল অর্জন করছে বলে তারা জানান। রাশিয়ায় এসময় সামার (গ্রীস্ম কালীন) ভ্যাকেশন চলছে। এই ছুটিতে দেশে আসা ৩৮ জন শিক্ষার্থী প্রকল্পের উদ্যোগে রবিবার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।

প্রকল্পের পরিচালক ড.সৌকত আকবর জানান, রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য রাশিয়ার মস্কোয় দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি হচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে ন্যাশনাল রিসার্চ নিউক্লিয়ার ইউনিভার্সিটিতে (মস্কো ইঞ্জিনিয়ারিং ফিজিক্স ইনস্টিটিউট— (মেফি) পড়ালোখার পাশাপশি হাতে কলমে কাজ শিখছেন।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থী নিউক্লিয়ার ফিজিক্স এর সেফটি এন্ড সিকিউরিটি, রিএ্যক্টর ফিজিক্স, থার্মাল ফিজিক্স এবং কন্ট্রোল শাখায় লেখাপড়া করছেন। তিনি জানান, ২০১৪ সাল হতে গ্র্যাজুয়েট এবং আন্ডার গ্য্যাজুয়েট পর্যায়ে মোট ৪৭ জন শিক্ষার্থী সরকারের বৃত্তি গ্রহণ করে মস্কোতে নিউক্লিয়ার বিষয়ে লেখাপড়া করছে। তারা দক্ষতা অর্জন করছেন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশন কন্ট্রোলিংয়ের ওপর। সরকারের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যস্থাপনা খাত’ হতে এসব শিক্ষার্থীদের মাসে ৭৫০ ডলার করে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যায়ের টিউশন ফি দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রসাটম) বহন ও তত্ত্বাধান করছে। এই বৃত্তির অর্থ সাশ্রয় করে শিক্ষার্থীরা ছুটিতে নিজ দেশে আসে বলে তিনি জানান। ২০১৮ সালে প্রথম ১২ জন এমএস ডিগ্রী অর্জন করে দেশে ফিরে এই প্রকল্পে যোগদান করবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সাথে সরকারের একটি চুক্তি রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী দেশে ফিরে রূপপুরে অন্তত ছয় বছর তাঁদের কাজ করতে হবে।

মেফির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্রালয় হতে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাত্তক (সম্মান) শেষে বৃত্তির জন্য মনোনীত হন। তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক প্রযুক্তিতে রাশিয়া পৃথিবীতে সেরা। রাশিয়ার লেখাপড়ার পদ্ধতি আমাদের তুলনায় ১০০ ভাগ এগিয়ে। শিক্ষকরা অত্যন্ত আন্তরিক। শুধু বাংলাদেশীই নয় ২৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া করছে। এখানে পড়ালেখার পদ্ধতি ভিন্ন। সরকারের পরমাণু শক্তি কমিশনও তিন মাস অন্তর আমাদের খোঁজ নিচ্ছে। আবেগাপূর্ণভাবে মোমিনুল বলেন, সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ও দেশের স্বার্থে নিজেকে এই প্রকল্পে আত্মনিয়োগ করতে চাই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা তিতুমির কলেজ হতে বৃত্তিপ্রাপ্ত রসায়নে স্নাতক (সম্মান) ফরহাদ হোসেন ওখানে শিক্ষকদের সাথে ছাত্রদের কোন দূরুত্ব নেই। আমাদের অবস্থান অন্য দেশের চেয়ে অনেক ভাল। এসময় ফরহাদ জানান, সম্প্রতি রস্তভ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে ১৫ দিনের ইন্ডষ্ট্রিয়াল ট্যুর ছিল। ট্যুর শেষে ধাপে ধাপে কয়েকটি পরীক্ষা হয়। এসব পরীক্ষায় ১০ জন ৯০ প্লাস নম্বর পায়। আর এই ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই বাংলাদেশের। ১৯৮৬ সালের পর হতে এযাবত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর বলে তিনি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক অনার্স করে নাজমুন নাহার তন্বি বৃত্তি পেয়ে মস্কোতে সেফটি এন্ড সিকিউরিটি বিভাগে অধ্যায়ন করছেন। তন্বি বলেন, ক্লাশে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্লান্টে ট্রেনিং এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার বিষয়টিকেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। রূপপুরে নির্মিত ভিভিআর ১২০০ রিএ্যাক্টর প্রসংগে তিনি বলেন, এই টেকনোলজি সর্বাধুনিক। আগামী শতাব্দিতে এই টেকনোলজি বিশ্বে নের্তৃত্ব দিবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

বুয়েট হতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ লেখাপড়া করে নাজমুস সাকিব নিউক্লিায়ারে এসএম ডিগ্রী অর্জনের জন্য বৃত্তি পেয়ে অধ্যায়ন করছেন। তিনি বলেন, এখানকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করব। পরমাণু শক্তি বিষয়ে আকর্ষণের জন্যই এসেছি। এখানে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষা উঁচুমানের। বাংলাদেশকে পরমাণু শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখতে চাই ভবিষ্যতে আমরা নিজেরাই এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারব।

এসময় প্রকল্পের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল হাসান, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মিজানুর রহমান, মূখ্য প্রকৌশলী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রকল্পের সাইট অফিসের কর্মকর্তা নূরে আলম প্রমুখ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

(এসকেকে/এএস/আগস্ট ২০, ২০১৭)