প্রবীর সাহা, পাবনা : পাবনার সুজানগরে দুই স্কুল ছাত্রীকে অপহনের পর গণধর্ষণের ভিডিও চিত্র ফেসবুকে  ছাড়ার সাথে জড়িত ৬ বখাটে সস্ত্রাসী বলে এলাকাবাসি জানিয়েছেন। মামলার পরেও তারা এলাকায় গ্রেফতারের পরোয়া না করে বীর দর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। পরে আদালতে নির্দেশে বিভিন্ন স্থান থেকে সোমবার  তাদের মধ্যে ৫ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিভিন্ন অপকর্মে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও কউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখেনী। রবিবার বিকেলে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর এলাকাবাসী ও তাদের সহপাঠিরা ফুসে উঠেছে। প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে সহপাঠিরা। মানবন্ধনে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অংশ নেন। এসময় ধর্ষকদের ফাঁসির দাবীতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, সোমবার রাতে এবং সকালে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চর ভবনীপুর মাষ্টার পাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে বিকেলে আদালতে তোলা হবে। অপরজন শাহিনকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

সরেজমিনে জানা গেছে, চর ভবনীপুর মাষ্টার পাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা ছিলো এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের সন্তান। সবার বয়স ২২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করেও দলীয় ছত্র ছায়ায় তারা পার পেয়ে যান। তারই ধারাবাহিকতায় সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর দুই ছাত্রী ১ আগষ্ট বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৬ বখাটে চর ভবনীপুর মাষ্টার পাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা মিলে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে পাশ্ববর্তী নিকিরী পাড়ার একটি বাশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা পালাক্রমে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে সেই ভিডিও চিত্র ধারন করে এবং ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়। দুই ছাত্রী বিষয়টি ভয়ে প্রথম দিকে গোপন রাখে। ঘটনার কয়েক দিন পর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে পুনরায় তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখান করে। এরপর বখাটেরা ওই ভিডিও চিত্রটি ফেসবুকে আপলোড করলে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পরে ভিডিওটি। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সুজানগর থানার ওসি মামলা গ্রহন না করে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া দেন।

পরে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়রের কাছে ওই দুই ছাত্রীর দরিদ্র পিতা মাতা বিচার দাবী করলেও তিনি কৌশলে শালীসী বৈঠকের মাধম্যে বিষয়টি মিমাংশা করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তারা ঘটনার ১৯ দিন পর রোববার দুপুরে পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: ইমরান হোসেন চৌধূরী মামলাটি গ্রহন করে আসামীদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা নম্বর ১২৫ ও ১২৬, তাং ২০.৮.১৭।

ঘটনার স্বীকার দুই ছাত্রী বলেন, এই ঘটনার পর থেকে বখাটেদের হুমকীর মুখে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।

এ ব্যাপারে ওই দুই ছাত্রীর পিতা-মাতা জানান, আমরা গরিব মানুষ, বখাটেরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানায় আমরা কোন বিচার পাইনি। এ ঘটনার পর থেকে আমারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আদালতের নিকট বখাটেদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানান তারা।

সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, বখাটেরা পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ার কারণে থানা মামলাটি গ্রহন না করায় আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। এই ঘটনার পর থেকেই ওই দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন তিনি। তিনি আরো বলেন আসামীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবীতে সোমবার স্কুলের সামনে মানবন্ধন করেছে ছাত্ররা।

সুজানগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধাারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়ে দুটির অভিভাবকরা আমার নিকট এসেছিল। এটা নিয়ে কয়েক দফা শালীসী বৈঠকও হয়েছে, কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। বখাটেরা তার কর্মী বা সমর্থকের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তারা আওয়ামী পরিবারের ছেলে হলেও আমার লোক নয়।

(পিএস/এএস/আগস্ট ২১, ২০১৭)