সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া চণ্ডীতলা গ্রামের নিভা মল্লিকের দায়েরকৃত অপহরণ মামলায় উদ্ধারকৃত ভিকটিমম কলেজ ছাত্রী ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা ও আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি শেষে বাগেরহাটের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার  বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক রাজীব কুমার রায়  সোমবার সন্ধ্যায় এ আদেশ দেন।

এদিকে কালিগঞ্জ থানার সিপাহী জেসমিন ও পুলিশ কোর্টের জিআরও সহকারি উপপরিদর্শক শিললুর রহমান আসামীপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা না করানোর উদ্যোগ ও ভিকটিম যাতে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে না পেরে সেজন্য সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন তারা।

কুশুলিয়া চণ্ডীতলা গ্রামের তুলসী দাস মল্লিক জানান, ভাইঝি পিয়াঙ্কা মল্লিক কুশুলিয়া স্কুল এণ্ড কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। জমি নিয়ে পারিবারিকভাবে বিরোধের জের ধরে বাবা জগন্নাথ মল্লিক জেল হাজতে থাকার সুবাদে সহপাঠী ফরিদপুর গ্রামের ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী কমপক্ষে পাঁচটি নাশকতার মামলার আসামী ইসরাফিল হোসেন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গত ১৪ আগষ্ট সকাল ৬টার দিকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে প্রিয়ঙ্কাকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় অপহৃতের মা নিভা রানী মল্লিক বাদি হয়ে পর দিন ইসরাফিল হোসেন, তার বাবা মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের নামে কালিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুধাংশু শেখর হালদার জানান, প্রিয়ঙ্কা অপহরণে সহায়তা করার অভিযোগে রোববার ভোর চারটার দিকে উপজেলার মুকুন্দ মধুসুধনপুরের নিজ বাড়ি থেকে ফিরোজ হোসেনকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্য ও একটি মোবাইল ট্যাকিং করে ফিরোজকে নিয়ে রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুরের ভাড়াটিয়া মোঃ হাবিবুর রহমানের বাসা থেকে ইসরাফিলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় প্রিয়ঙ্কা মল্লিককে। সোমবার সকালে গ্রেফতারকৃত ইসরাফিলকে আদালতে পাঠানো হয়। একই সময়ে ভিকটিম প্রিয়াঙ্কাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতাল ও তার ২২ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়।

তিনি আরো জানান, প্রিয়ঙ্কাকে হাসপাতালে ও আদালতে পাঠানোর সময় নারী কন্সটেবল হিসেবে কুশুলিয়া গ্রামের কাজল কাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী সিপাহী জেসমিন ও সিপাহী আফজালকে পাঠানো হয়। হাসপাতালে যাতে প্রিয়ঙ্কা ডাক্তারী পরীক্ষা না করে সেজন্য জেসমিন তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন। এমনকি আসামী ইসরাফিলের পক্ষের এক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে মোটা অর্ংকের টাকা নিয়ে তিনি ভিকটিম যাতে অপহরণের কথা ২২ ধারার জবানবন্দিতে না বলে সেজন্য বিভিন্নভাবে তাকে বোঝান। একপর্যায়ে ভিকটিম ডাক্তারী পরীক্ষা করবেন না বলে নির্ধারিত ডাক্তার ফরহাদ জামিলকে বলে আসেন। এতে ওই ডাক্তার ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের অবহিত করলে ও সিপাহী জেসমিনের তথার প্রতিবাদ করায় পরবর্তীতে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

তিনি আরো জানান, ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে প্রিয়াঙ্কাকে পুলিশ কোর্টের জিআরও অফিসে আনা হয়। পরে তাকে কালিগঞ্জ কোর্টের জিআরও শিল্লুর রহমানের পিছনে বসিয়ে দেন সিপাহী জেসমিন। পরে তারা ভিকটিমকে মায়ের জিম্মায় না যাওয়া ও অপহরণ হয়েছে এমন কথা অস্বীকার করার জন্য বারবার স্মরণ করিয়ে দেন। পরে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য জেসমিন আসামীপক্ষের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন ভিকটিমের। এরপরও বিচাররকের খাস কামরায় ঢোকার আগে শিল্লুর ও জেসমিন কঠিনভাবে আসামী পক্ষের হয়ে ভুগোল পড়িয়ে দেন ভিকটিমকে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. বিবেকানন্দ রায় ও অ্যাড. শেলী জানান, ভিকটিমের ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান শেষে তার মা নিভা রানী ও কাকা তুলসী দাস মল্লিক ও দিদিমা শিখা রানী সরদারকে খাস কামরায় ডাকেন বিচারক। সেখানে তারা ও যান। এ সময় ভিকটিমকে নিজের জিম্মায় চান নিভা রানী মল্লিক। তাতে রাজী না হয়ে প্রিয়াঙ্কা নিজের জিম্মায় যেতে চাইলে তারা বিরোধিতা করেন। এ সময় প্রিয়াঙ্কাকে ফতেমা খাতুনে ধর্মান্তরিত করে ১৫ বছরের ইসরাফিলের (২০০২ সালের ২০ জুন জন্ম তারিখ) সাড়ে ২১ বছর দেখিলে বাগেরহাটের নোটারী পাবলিক এসএম রেজাউল করিমের এফিডেফিডের মাধ্যমে বিবাহ ঘোষণার বিরোধিতা করেন তারা। মেয়েকে নিজের জিম্মায় দিলে তার পরিণতি কি হতে পারে তা বিচরককে অবহিত করেন তারা (আইনজীবীরা)। একপর্যায়ে বিচারক সব কিছু বিবেচনা করে সোমবার সন্ধ্যার পর ভিকটিমকে বাগেরহাটের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ফরহাদ জামিল জানান, ভিকটিম প্রিয়াঙ্কা ডাক্তারী পরীক্ষা করবে না বলে নিয়ম বহির্ভুতভাবে জানিয়ে যান সিপাহী জেসমিন। বিষয়টি তিনি ভিকটিম পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে সিপাহী জেসমিনের কথার প্রতিবাদ করে ভিকটিম স্বেচ্ছায় ডাক্তারি পরীক্ষা করেছে।

তবে সিপাহী জেসমিন বলেন, ভিকটিমের কথামত তিনি বিষয়টি ডাক্তার সাহেবকে বলেছিলেন। এ ছাড়া আসামীপক্ষের হয়ে তিনি ভিকটিমকে কোন কথা কথা ভিকটিমকে বলেননি বলে জানান তিনি। একইভাবে আসামী পক্ষের হয়ে ভিকটিমকে কোন কথা শিখিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন কালিগঞ্জ কোর্টের জিআরও শিল্লুর।

সাতক্ষীরা কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল বারী জানান, বাগেরহাটের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ভিকটিম প্রিয়াঙ্কাকে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামী ইসরাফিলকে সোমবার বিকেলে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের জেলর তুহীন কান্তি খান জানান, পিয়াঙ্কাকে বাগেরহাটের নিরপত্তা হেফাজতে পাঠানো সংক্রান্ত আদালতের আদেশটি মঙ্গলবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত তিনি পাননি। মঙ্গলবারের মধ্যে আদেশ পেলে তাকে বুধবার বাগেরহাটে পাঠানো হবে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ২২, ২০১৭)