রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরের সরিষাবাড়িতে যমুনা সার কারখানা থেকে পাচারকালে ৯৯ বোতল অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করেছে দুদক। দেশের বৃহৎ ও একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানার (জেএফসিএল) ৯৯ বোতল তরল অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার ভুয়া চালানে পাচারের সময় জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার কারখানায় অভিযান চালিয়ে এই অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) টাঙ্গাইল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের অনুসন্ধানী টিম। টিমের সদস্যরা হলেন উপ-সহকারী পরিচালক রাজু মো. সরোয়ার, এএসআই হান্নান মিয়া ও কনস্টেবল মোতাহার হোসেন।

দুদকের অভিযানে জব্দকৃত সিলিন্ডার গ্যাসগুলো যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু ছিল করা ছিল। ইস্যুকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো তারাকান্দি ট্রাক-ট্যাঙ্কলড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের মেসার্স বুশরা বাণিজ্যিক সংস্থা, তার ভাই শফিকুল ইসলামের মেসার্স রিক্ত এন্টাপ্রাইজ, ভগ্নিপতি ফরহাদ আলীর মেসার্স জাহাঙ্গীর এন্টারপ্রাইজ, আহম্মেদ নগরের মেসার্স সিয়াম এন্টাপ্রাইজ, মোস্তাক তালুকদারের মেসার্স সরিষাবাড়ি ট্রেডার্স, আরামনগর বাজারের মাসুদুর রহমানের মেসার্স নিহা এন্টারপ্রাইজ, তারাকান্দি ট্রাক-ট্যাঙ্কলড়ি মালিক সমিতির সভাপতি ও আওনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেনের মেসার্স বি হোসেন এবং পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেনের মেসার্স আলমাস এন্টারপ্রাইজ।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসেন জানান, যমুনা সার কারখানা থেকে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া চালানে নিয়মিত তরল অ্যামোনিয়া সিলিন্ডার গ্যাস পাচার হচ্ছে অভিযোগে তদন্ত চালানো হয়। তদন্তকারীরা কারখানার ফাইল ও বিভিন্ন বিভাগে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১১৩টি অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে ৯৯টি জব্দ করেন। জব্দকৃত অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডারগুলো কারখানার অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভুয়া চালানে পাচারের চেষ্টা চলছিল। জব্দকৃত অ্যামোনিয়া গ্যাস সিলিন্ডার কারখানা কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

অভিযোগ রয়েছে, যমুনা সার কারখানাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী চোরাই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। ট্রাক ও ট্যাঙ্কলড়ি মালিক সমিতি, সিবিএ, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি সমিতি, সার ও ডিলার সমিতি, পরিবহণ সমিতিসহ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ে গড়া এ সিন্ডিকেট নিয়মিত চোরাই পথে তরল অ্যামোনিয়া গ্যাস, সার ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ পাচার করে আসলেও কর্তৃপক্ষ নীরব। এ সব অপকর্মের সাথে কারখানার উপ-ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মাহবুবুল হকসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও জড়িত বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগেও চোরাই পথে পাচারকালে ৯টি সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল জব্দ করেছিল কারখানার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা।

এ ব্যাপারে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আ.ন.ম. শরিফুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ভুলে একজনের নামের সিলিন্ডার অন্যজনের নামে ইস্যু করা হয়েছিল। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে দেখবো।

(আরআর/এএস/আগস্ট ২৩, ২০১৭)