মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলা পরিচালনা করা নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকনের মেয়ে মাইশা ওয়াজেদ প্রাপ্তিকে (১৯) হত্যা ও অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই সময়ে বিশ মেশানো বিষাক্ত কিছু ওই মেয়ের মুখে প্রবেশ করিয়ে অচেতন করে অপহরণের চেষ্টা করলে সে কোনমতে ছাড়া যায়। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিপরীতে হাজী মঞ্জিল ভিলার নিচ তলায় ওই ঘটনা ঘটে।

এর আগে ২২ আগস্ট মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় নিম্ন আদালত প্রদত্ত মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে ১১জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৯জনের সাজা আগেরটিই বহাল আছে। এর আগে গত ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২৬জনের মৃত্যুদ- ও ৯জনের মৃত্যুদ- প্রদান করে। নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ছিলেন ওয়াজেদ আলী খোকন। পরিচালনা করতে গিয়ে কখনো আসামী পক্ষের চোখ রাঙানি, আসামী পক্ষের আইনজীবীদের রোষানলে পড়লেও শেষতক কড়াভাবেই আইনী লড়াই চালান ওয়াজেদ আলী খোকন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবার সূত্র জানান, হাজী মঞ্জিলের চতুর্থ তলায় তৌহিদুল ইসলামের ‘ম্যাথ’ কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়াশোনা করে প্রাপ্তি। সে নারায়ণগঞ্জ এবিসি স্কুলের ও লেভেলের ছাত্রী। আর তৌহিদুল ইসলামও ওই স্কুলের শিক্ষক। এখানে বিকেল ৪টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত কোচিং পড়ানো হয়। প্রতিদিনের মত বিকেল সাড়ে ৪টায় সে প্রাইভেট পড়ার জন্য আসে। বিকেল সোয়া ৬টায় কোচিং শেষে ভবন থেকে নিচে নামার সময়ে বঙ্গবন্ধু সড়কে একটি সাদা রঙয়ের ক্যারিনা গাড়িতে করে কয়েকজন যুবক এসে তার গতিরোধ করে। তখন তাকে বলে, তুমি কী ওয়াজেদ আলী খোকনের মেয়ে। প্রাপ্তি তখন হ্যাঁ জবাব দেয়। পরে ওই লোকজন বলে, তোমার বাবা তো গতকাল একটা ভালো কাজ করেছে। সে ভালো আইনজীবী। সে ভালো কাজ করেছে। তাই তোমাকে মিষ্টি খাওয়াবো। তখন প্রাপ্তি মিষ্টি খেতে অনীহা প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে লোকজন একটি পলিথিনে থাকা বিষাক্ত কিছু জোর করে প্রাপ্তির মুখে ঢেলে দেয়। তখন সে কোনমতে ওই স্থান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আশেপাশের লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলায় দুর্বৃত্তরা ওই ক্যারিনা গাড়িতে করে দ্রুত দুই নং রেল গেট দিকে পালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রাপ্তি মুঠোফোনে বিষয়টি তার বাবা ওয়াজেদ আলী খোকনকে জানালে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে।

প্রথমে তাকে শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হলে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ঘটনাস্থলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, আমরা প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবার থেকে জেনেছি ৩জন যুবক এসে প্রাপ্তিকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সাত খুনের মামলা পরিচালনার কারণেই কী এ ধরনের ঘটনা কী না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সাত খুনের মামলার কারণে মিষ্টি খাওয়ানোর নামে বিষ খাওয়ানেরা চেষ্টা করা হয়। তবে পুরো বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তের আগে স্পষ্ট করেই বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার একেএম তারেক জানান, প্রাপ্তিকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। সেটা ইতোমধ্যে ওয়াশ করা হয়েছে। এখন অবস্থা শংকামুক্ত।

(এমএনইউ/এএস/আগস্ট ২৩, ২০১৭)