ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডার ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলের তিনটি গ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে ৫০টি ইট ভাটা। ইট তৈরির প্রধান উপকরণ মাটির সহজপ্রাপ্যতা ও ইট ভাটার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এখানে ভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত বছর এখানে ইটভাটার সংখ্যা ২৫টি থাকলেও চলতি বছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টিতে। ইট পুড়ানো মৌসুমকে সামনে রেখে নতুন ২৫টি ভাটার নির্মাণ  কাজ চলছে বেশ জোরে সোরে।

সরজমিনে লক্ষ্মীকুন্ডার তিনটি গ্রাম কামালপুর, দাদাপুর ও বিলকেদার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষি জমির উপর এসব ইট ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাটা নির্মাণের জন্য চিমনীর উচ্চতা ও আনুসঙ্গিক যে নির্দেশনা রয়েছে তা অধিকাংশ ভাটা মালিকারা যথাযথ ভাবে মানছেন না। বেশির ভাগ ভাটার মালিকরা ইট তৈরির জন্য অবৈধ উপায়ে পদ্মার চর হতে মাটি সংগ্রহ করছেন। এছাড়া বেশীরভাগ ভাটাতে জ্বালানী হিসেবে কয়লার পরিবর্ততে কাঠের খড়ি ব্যবহার করা হয়। পদ্মার চরে গিয়ে ভাটার মালিকদের মাটি সংগ্রহের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে।

এলাকাবাসীরা জানান, অধিক মুনাফার আশায় ভাটার মালিকরা কৃষি জমিতে ভাটা নির্মাণ করছেন। ফলে চরাঞ্চলের কৃষি জমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইটভাটার প্রভাবে এলাকার পরিবেশও বিপর্যয় ঘটছে। এভাবে ভাটার সংখ্যা বাড়তে থাকলে কৃষি আবাদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ইট তৈরির জন্য ভাটার মালিকরা প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত করে পদ্মার চর হতে মাটি কেটে আনছে। দিনে মাটি কাটতে দেখা না গেলেও রাতের আঁধারে এসব মাটি কাটা হচ্ছে।

লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, এক সময় ঈশ্বরদীর জয়নগর এলাকায় শত শত ধানের চাতাল নির্মাণের ফলে জয়নগর শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেও ইটভাটা শিল্প গড়ে উঠছে। এতে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটছে। ইট তৈরির জন্য মাটি ও বালির সহজ প্রাপ্যতার কারণে এখানকার ভাটার মালিকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তাই পর্যায়ক্রমে ভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শিমুল বলেন, লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটা গুলো নিয়মানুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদকে ট্যাক্স প্রদান করছে। গত অর্থ বছরে ২৫টি ভাটার মালিক ট্যাক্স প্রদান করে। কিন্তু বিগত চেয়ারম্যানের সময় এই ট্যাক্স আদায় করা হতো না।

লক্ষ্মিকুন্ডা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, এখানকার ভাটাগুলোতে উন্নতমানের ইট তৈরি করা হয়। এই ইট দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহার হয়। ইট নির্মাণের জন্য এখানে মাটি প্রাপ্তির সুবিধার কারণেই মূলত ভাটা গড়ে উঠছে। সব ভাটার সরকারি অনুমোদন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আরিফ বলেন, বেশ কয়েকটির অনুমোদন রয়েছে। কিছু অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং আরো কিছু ভাটা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। পদ্মার চর থেকে মাটি সংগ্রহের ব্যাপারটি তিনি অস্বীকার করে বলেন, পদ্মার চর থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয় না। ফসল হয় না এমন জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে তার জমি হতে মাটি সংগ্রহ করা হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ইট ভাটার সংখ্যা ও অনুমোদন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন ইউএনও কার্যালয়ের ফিরোজ আলী বর্তমানে হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন। নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আক্তার বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু আমার জানা নেই। কোন অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা হলে আমি সরকারি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(এসকেকে/এএস/আগস্ট ২৪, ২০১৭)