বগুড়া প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টিতে গর্তের সৃষ্টি হয়ে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে যান চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বগুড়ার সীমানা সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার কাছে রহবল পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের ২৫ কিলোমিটারেই রয়েছে এসব গুপ্তগর্ত। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত রয়েছে।

এই খানাখন্দক মাড়িয়ে যানবাহন চলাচলে চালকদের যেমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঠিক তেমনি যাত্রীরা সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। আবার মহাসড়কের কোথাও কোথাও গর্তে পড়ে যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকছে। সৃষ্টি হচ্ছে দির্ঘ যানজটের। সড়কের এই বেহাল দশার উন্নয়নে সড়ক বিভাগ বলছে বৃষ্টি কমলেই সড়কের কাজ করা হবে। আপাতত ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মাটি, বালু ও ইটের মিশ্রণ দিয়ে গর্তগুলো ভরাটের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বগুড়া সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, একটি প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছেন। বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু করা হবে। আপাতত ইট এবং পাথর দিয়ে সংস্কার (সিল) করা হয়েছে। তবে বৃষ্টির মধ্যে যত সিলই করা হোক তার কোনো স্থায়িত্ব নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি গর্তগুলো পূরণ করে দিতে। রংপুর, গাইবান্ধা ও বগুড়া মিলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। বৃষ্টি কমলেই মহাসড়ক মেরামত করার কাজ করা হবে।

বগুড়া থেকে ঢাকায় চলাচলকারি ট্রাক এবং বাস চালকরা জানিয়েছেন, বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা এলাকা পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকায় সড়কে বাঁক ও রাস্তায় গর্ত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কের নাকাল অবস্থায় যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগ নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে তেমনি যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রীরা। সময়মত ঢাকায় যাচ্ছে না কাঁচা সবজি। মহাসড়কে একটু পর পরই ছোট বড় গর্ত। একই অবস্থা শেরপুর থেকে চান্দাইকোনা সীমানা পর্যন্ত।

রংপুর থেকে বগুড়ামুখী একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক আমিনুল ইসলাম জানান, রংপুর থেকে বগুড়ামুখী সড়কের অসংখ্য স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো সাধারণ যানবাহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গর্তের মধ্যে গাড়ির চাকা পড়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে জ্যামে পড়ে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে প্রায়ই ইট, পাথর দিয়ে সংস্কার করা হয়। তবে এটি সড়কের কোনো কাজেই আসে না। সামান্য বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা আবারও গর্তে ভরে যায়। সেখানে পানি জমে চালক এবং যাত্রীদের ঝুঁকিতে পড়তে হয়। মহাসড়কে যান চলাচল অবাধ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন যাতায়াতকারীরা।

নাটোর-ঢাকা-পাবনা এবং নাটোর-বগুড়া মহাসড়কেরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকার বেহাল দশা। মহাসড়কের বিটুমিন ও পাথর উঠে গিয়ে ছোট বড় হাজার হাজার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার না করায় এ অবস্থার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবহন।

ঈদের আগে রাস্তাটি সংস্কার সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বগুড়া ও নাটোরের সওজ বিভাগ। ঈদের মধ্যে যানবহন চলাচলের সংখ্যা আরো বাড়বে এই সড়কে। পাথর ছড়িয়ে পড়ায় মহাসড়কটির ঝুঁকি বেড়েছে। ফলে ঈদে এই মহাসড়কে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ। দক্ষিণাঞ্চলের যানবহনগুলো নাটোর-পাবনা মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার এলাকার দুর্ভোগ পেরিয়ে নাটোর থেকে শেরকোল এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় আবার দুর্ভোগে পড়ছে। নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার যোগাযোগের এটিই একমাত্র রাস্তা। এই রাস্তারও ১৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা।

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিকরুল ইসলাম জানান, নাটোর-ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের মাত্র ৫ কিলোমিটার অবস্থা একটু খারাপ। বাকি সড়ক ভালো রয়েছে। এই সড়কের ২৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ঈদের পর টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

জানা যায়, নাটোর থেকে বগুড়া মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩২ কিলোমিটার নাটোর এবং ২৮ কিলোমিটার বগুড়ার অংশ। উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই মহাসড়কটি।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০১৭)