নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ স্কুলগুলোতে ভাল ফলাফলের নামে চলছে কোচিং বাণিজ্যের পরে এবার উন্নয়নের নামে কয়েকটি স্কুলের মাঠে বসছে গরুর হাট। কোরবানীর ঈদকে ঘিরে বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে উন্নয়নের নামে গরুর হাট বসানো হয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও কোচিংয়ের টাকা গুনতে হয় মাস শেষে।

কাঞ্চন পৌর এলাকার কাওছার ভুঁইয়া জানান, প্রতিদিন ১ থেকে দেড় ঘন্টা কোচিং ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসে আদায় করা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। সকাল ৮ টা থেকেই অধিকাংশ স্কুলে কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্লাসে মনোযোগ কমে যাচ্ছে। বাধ্যতামূলক কোচিং ক্লাসের ফলে অনেক অভিভাবকও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো ও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের বেতন, কোচিং ফি, পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

আবার বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নাম করে স্কুল গত ২৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ ঘোষণা করে কোরবানীর পশুর হাট বসানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানান, সকাল ৮টায় শিক্ষার্থীদের কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে। সাধারণ ক্লাস শেষে বিকেল ৪টায় স্কুল ছুটি দেয়া হয়। এতো সময় স্কুলে থাকার পর ছাত্রছাত্রীরা বাসার লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। আবার প্রাইভেটতো রয়েছেই। তবে শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ভালো করানোর নামে নিন্মমানের কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে। এ কোচিং ক্লাসের লেখাপড়া শিক্ষার্থীদের কোনো কাজেই আসছে না। নামে মাত্র কোচিং ক্লাস। আসলে এটা শিক্ষকদের বাণিজ্য।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রূপগঞ্জের ভুলতাস্থ স্কলার্স হোম স্কুল, কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজ, গোলাকান্দাইল মজিবর রহমান ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হাটাবো আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা উচ্চ তা বিদ্যালয়সহ প্রায় সবগুলো মাধ্যমিক স্কুলেই সকাল থেকেই কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে। তবে এসব স্কুলগুলোতে লেখাপড়ার মান খুব একটা ভালো নয় বলেও জানান অভিভাবকরা। অষ্টম শ্রেণী ও নবম শ্রেণীর রেজিষ্ট্রেশনের পরই কোচিং ক্লাস করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়। এপ্রিল মাস থেকে প্রত্যেক শিক।ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। ক্লাস না করলেও মাস শেষে কোচিং ফি, মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি গুনতে হয়। নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের সুনাম ও ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট ভালো করার জন্যই অষ্টম ও ১০ শ্রেণীতে কোচিং চালু করা হয়েছে। তবে কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। কোচিং ক্লাস করানোর জন্য শিক্ষকদেরও অতিরিক্ত বেতন দিতে হয়।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল মোল্লা জানান, শিক্ষার্থীরা বাড়িতে লেখাপড়া করতে চায় না। তাই স্কুলেই পড়ার জন্য চাপ বেশি দেয়া হয়। তাছাড়া স্কুলের উন্নয়নের জন্য স্কুল মাঠে গরুর হাট বসানো হয়েছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওমর ফারুক বলেন, কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে কোচিং করা যাবে না। তাছাড়া অতিরিক্ত কোচিং ফিও নেয়া অন্যায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

(এমএনইউ/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০১৭)