শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শুকনো মৌসুমে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন শান্তি রঞ্জন মন্ডল (৭০)। আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা বানান। জেলার তিনটি স্থানে শুক্রবার ভোজেশ্বর বাজার এবং মঙ্গলবার বুড়ির হাট ও সুবচনী বাজারে নৌকার হাটে বসে। শান্তি রঞ্জন মন্ডল প্রতি মঙ্গলবার বুড়ির হাট নৌকার হাটে নৌকা নিয়ে আসেন।

জানা যায়, প্রতি মঙ্গলবার বুড়িরহাট বাজারে বসে নৌকার হাট। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট চলে। সেখানে নৌকা বেচাকেনা হয়। নৌকার হাটে নৌকা ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই। নৌকা কেনার পর নৌকায় করেই সেটি বহন করতে হয়। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এই হাটে আসেন নৌকা কিনতে। তবে আগে সপ্তাহে হাটে প্রায় দুইশ নৌকা বিক্রি হলেও এখন বিভিন্ন জায়গা ভরাট করে ফেলায় নৌকার বিক্রি কমেছে বলে জানা গেছে।

শান্তি রঞ্জন মণ্ডল জানান, তার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে বাবার সঙ্গে বুড়ির হাট নৌকার হাটে আসেন। তখন থেকেই তার নৌকা বানানোর কাজ শুরু হয়। অভাবের সংসার থাকায় বিদ্যালয়ের দরজায় পা ফেলতে পারেননি। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসাসের হাল ধরতে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। তবে নৌকাই তার একমাত্র ভরসা।

নৌকার হাটে নৌকা কিনতে আসা আলহাজ্ব আবুল হাচান মুন্সী (৮৫) জানান, সড়ক দিয়ে এলাকায় চলাফেরা করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তার পরিবারের একমাত্র ভরসা। পুরোনো নৌকাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি নৌকা কিনতে হাটে এসেছেন।

হাটে শান্তি রঞ্জন মন্ডল ছাড়াও নৌকা তৈরির কারিগর রাম সাধু মন্ডল, ইন্দ্রজিত মন্ডল, নারায়ন মন্ডলের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নৌকার হাট বসছে। এটিই শরীয়তপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো নৌকার হাট।

নৌকার এসব কারিগররা জানান, বর্ষা মৌসুমে শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে বিভিন্ন নিচু এলাকা ডুবে যায়। সেসময় নৌকাই হয়ে ওঠে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আবার নিম্নাঞ্চলের অনেক লোক মাছ ধরা, খামারের পশুর জন্য ঘাস কাটা, পারাপারের জন্যও নৌকা ব্যবহার করেন। আগে সপ্তাহে হাটে প্রায় দুইশ নৌকা বিক্রি হলেও এখন বিভিন্ন জায়গা ভরাট করে ফেলায় নৌকার বিক্রি কমেছে বলেও জানান তারা।

গোহাড়া, উইড়া আম, হিজল ও পোয়া কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকা। গজারি ও গাব কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় নৌকার বইঠা। ১২ ফুটের একটি নৌকা বানাতে প্রায় আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো মানের একটি নৌকার দাম পড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। নৌকা কেনার পর ক্রেতাদের বাজারের ইজারাদারকে প্রতি ১০০ টাকায় ১০ টাকা করে দিতে হয়।

নৌকা ব্যবসায়ী মোস্তাফা মাঝি ও বাদল দফতরী বলেন, শুধু বর্ষাকালে চার মাসের জন্য মৌসুমি ব্যবসা করি। প্রতি মঙ্গলবার নৌকা কিনতে আসি এই হাটে। এই হাটে পাইকারি কিনে শুক্রবার ভোজেশ্বর বাজার হাটে নিয়ে বিক্রি করি। একটি নৌকা কিনতে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা লাগে। বিক্রি করি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০১৭)