আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি স্পট থেকে মিনিবাস মালিক সমিতির নামে চেকপোষ্ট বসিয়ে দুরপাল্লার যাত্রিবাহী পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চলতি পথে সকলের সামনেই গাড়ি হতে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে।

দেখা গেছে, অকুস্থলে পৌছে এসব পরিবহন থেকে নির্দিষ্ট চাঁদার টাকা সড়কে ফেলে দেয়া হচ্ছে। পরে চেকপোষ্টে নিযুক্ত শ্রমিকেরা সেই টাকা তুলে নিচ্ছে । প্রতিমাসে এভাবে প্রায় লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকাগামী পরিবহন যাত্রিদের নিকট থেকে বিশেষ একটি পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে সর্বোচ্চকালের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। প্রতিবারই ঈদের আগে ওই পরিবহন ভাড়ার পরিমান নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়েও কয়েকগুন বেশি নেয়া হয়। তবে এব্যাপারে জেনেও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণে ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড়ের উত্তরে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দক্ষিণে দু’টি টোল ঘর তোলা হয়েছে প্রায় ৪ মাস আগে থেকে। সেখানে মালিক সমিতির নিয়োজিত শ্রমিকেরা সারাদেশ থেকে আসা সকল যাত্রিবাহী পরিবহন থেকে টাকা তুলছে। পরিবহনভেদে এর পরিমাণ ১শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেসব পরিবহন চাঁদার টাকা দিচ্ছে না তাদের নানাভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

দেখা গেছে, ওই পথে চলাচলরত দুরপালøার যাত্রিবাহী পরিবহনগুলো থেকে এসব চেক পোষ্টে টাকা ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এরপর সেই টাকা তুলে নিচ্ছে চেকপোষ্টে নিযুক্ত শ্রমিকেরা। দক্ষিণাঞ্চলের সবক’টি জেলা ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহন এই পথে চলাচল করছে। প্রতিটি পরিবহনকেই টাকা দিতে হচ্ছে। ঈদের আগে এই টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। সূত্র জানায়, প্রতিদিন এভাবে বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। এক মাসে যার পরিমাণ কমবেশি প্রায় ৬ লাখ টাকা। এই টাকার কিছু খরচ বাদে বিভিন্ন খাতে হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোকাররম হোসেন আশফাক এব্যাপারে বলেন, ভাঙ্গার বিশ্বরোডের উত্তরে ও হাসপাতালের দক্ষিণের এ দু’টি চেক পোষ্ট চাঁদাবাজির জায়গা না। এই রাস্তা দিয়ে যাতে কোন পরিবহন ঢুকতে না পারে, আমাদের লোকাল বাসের যাত্রি উঠাতে না পারে, ওভারলোড করতে না পারে এসব নানা বিষয় দেখার জন্য এই চেকপোষ্ট। তবে কোন কোন বাসের হেলপার-সুপারভাইজার বাস থেকে ১০/২০ টাকা ছুড়ে ফেলতে পারে। সেটি অন্য ব্যাপার। এই দু’টি চেক পোষ্টের পেছনে প্রতিমাসে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ফরিদপুরের সড়ক পথে কোথাও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে না জোর দাবি করে ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির এই সভাপতি মোকররম হোসেন আশফাক উল্টো অভিযোগ করেন, পাশর্^বর্তী ঝিনাইদহ, যশোর, মেহেরপুর, মাদারিপুর তথা প্রায় সব জেলাতেই সড়ক পথে চাঁদা তোলা হচ্ছে। একটি পরিবহন নিয়ে ভাড়া মেরে আসতে গেলে পথে পথে প্রায় ১ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু ফরিদপুরেই। এখানে কাউকে কোন চাঁদা দিতে হচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনও সহযোগীতা করছে।

এদিকে ভাঙ্গা বিশ্বরোডের উত্তরে মিনিবাস মালিক সমিতির অদূরে একটি পুলিশের চেকপোষ্টও বসানো হয়েছে। মোটর সাইকেল, ট্রাক ও পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র দেখা হয় সেখানে। এখানে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে পিকআপ ও বিশ্বরোডে চলাচলরত নসিমন থেকে মোটা অংকের দুর্নীতি করা হয় বলে তাদের অভিযোগ।

এদিকে ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহন থেকে মাত্রাতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জানা গেছে, ফরিদপুর থেকে ঢাকার দুরত্ব প্রায় ১শ’ ১০ কিলোমিটার। সে অনুপাতে ফেরি বা লঞ্চ ভাড়া ও অন্যান্য টোলসহ বিআরটিএ এর নির্ধারিত ভাড়া সর্বোচ্চ ২শ’ ৬২ টাকা। কিন্তু সেখানে তারা আদায় করছে সাড়ে ৩শ’ টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে এই ভাড়া প্রায় ৫শ’ টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসি কোচে ঈদের সময় ভাড়ার পরিমাণ ৭/৮শ’ টাকাও গুনতে হয় যাত্রিকে।

এ ব্যাপারে ওই পরিবহনের কাউন্টারে কর্তব্যরতদেও কাছে জানতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তারা মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানান। তবে মালিক পক্ষের সাথে এব্যাপারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


(এএফ/এসপি/আগস্ট ২৭, ২০১৭)