লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের মিঠাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ভবন ধসের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করেন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। যে কোন মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে ভবন।

সরেজমিনে মিঠাপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এ বিদ্যালয়ে দু’টি ভবন রয়েছে। এর মূল ভবনের চারটি কক্ষের মধ্যে তিনটি শ্রেণীকক্ষ, অন্যটি অফিস কক্ষ। প্রতিটি কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদের ভিম, বারান্দার পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। অফিস কক্ষের অবস্থা আরও নাজুক। জানালার ওপরের অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। এর মধ্যেই ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে বেঞ্চ আছে মাত্র ২৬ জোড়া। এক বেঞ্চে দু’জন বসা যায়। এর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপোযোগী। শিক্ষার্থীর তুলনায় বেঞ্চ কম থাকায় গাদাগাদি করে ও মেঝেতে বসে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে একটি গভীর নলকূপ থাকলেও দু’বার মাথা চুরি হওয়ায় এখন সেটি অকেজো। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৬ সালে ৫১ শতাংশ জমির ওপর এ বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। ৬ শিক্ষক বিশিষ্ট এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ২৫৮ জন। ১৯৯৩-৯৪ সালে একতলা ভবনটি নির্মিত হয়। ভবনে খুব নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তখনই স্কুল কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি মাহাবুর রহমান জানান, তখন নিম্নমানের কাজের বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সহকারি শিক্ষক রবিউল ইসল্মা ও নিলুফা ইয়াসমীন বলেন, প্রায়ই ক্লাস চলাকালে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে দু’টি বেঞ্চও ভেঙ্গেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এখন ছাদের ভিমে ফাটল ধরায় সবাই আতঙ্কে আছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।


পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিমন জানায়, ক্লাসে বই ও স্যারের দিকের চেয়েও নজর বেশি থাকে ছাদের দিকে। ছাদের বালু পড়ে বই-খাতা ও জামা-কাপড় নষ্ট হয়। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মৌমিতা খানম বলে, ‘ভয় করে কন্যে যেন মাথার ওপর বিল্ডিং ভাঙ্গে পড়ে।
অভিভাবক অশোক ঘোষ জানান, এ অবস্থায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। অপর অভিভাবক সলোকা বিশ্বাস বলেন, ‘মাঝে মাঝে স্কুলে গিয়ে বাচ্চাটারে দেখে আসি।


প্রধান শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, এ অবস্থায় ক্লাস নেওয়া বিপদজনক। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ পিইডিপি-২ এর আওতায় ২০০২ সালে স্কুল চত্বরে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটিও এখন ব্যবহার অনুপোযোগী।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এ স্কুলের বিষয়টি ঊদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।বরাদ্দ পেলে ভবন নির্মাণ করা হবে।

(আরএম/এএস/জুন ২৮, ২০১৪)