আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ধর্ষণের অভিযোগে গুরমিত রাম রহিম সিং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ভক্তদের সহিংসতার মাঝে হেলিকপ্টার যোগে বিতর্কিত এই ধর্মগুরুকে পঞ্চকুলা থেকে রোহতকের কারাগারে নেয়া হয়। শুক্রবার ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন অংশে দাঙ্গা ও অগ্নিসংযোগ করে রাম রহিমের ভক্তরা।

তবে সোমবার তার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা কেন্দ্র করে যাতে একই ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিক বিবেচনা করে বিচারপতি জগদ্বীপ সিংকে হেলিকপ্টারযোগে রোহতকের কারাগারে নেয়া হচ্ছে। সেখানেই তিনি রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন দুপুর আড়াইটায়।

রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর রাজ্যের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে আধা-সামরিক বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য ও দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কারাগারের আশ-পাশের ১০ কিলোমিটার এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সোমবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। চাপা উত্তেজনায় থমথমে হরিয়ানার সব স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রোহতকের সড়কে সড়কে কাঁটাতারের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। রোহতকের স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে বাড়ি-ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ডেরা সাচ্চা সওদার জ্যেষ্ঠ সদস্যদেরকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

রাম রহিমের সমর্থকদের দাঙ্গায় ৩৮ জনের প্রাণহানির তিনদিন পর রোহতক পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে বলছে, কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতার চেষ্টা হলে তারা গুলি ছুড়বেন।

রোহতক পুলিশ কর্মকর্তা নবদ্বীপ সিং বীরক বলেন, আমরা কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছি; যাতে রোহতক জেলা ও রোহতকের কারাগারে কেউ প্রবেশ করতে সক্ষম না হয়। তিনি বলেন, ‘আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে চলবে এবং কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’

রায় ঘোষণার একদিন আগে ডেরা সাচ্চা সওদার দেড় লাখ ভক্ত রাম রহিমের প্রতি সমর্থন জানাতে পঞ্চকুলায় জমায়েত হয়। হরিয়ানায় সহিংস হয়ে উঠে বিতর্কিত এই ধর্মগুরুর ভক্তরা। পরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও লাঠিপেটায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে রাম রহিমের ডেরা সাচ্চা সওদার শতাধিক শাখা বন্ধ করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। ডেরা সাচ্চার আস্তানা থেকে লাঠি-সোটা, পেট্রোল উদ্ধার করা হয়। হরিয়ানার সীর্ষ এলাকায় এক হাজার এলাকাজুড়ে ডেরা সাচ্চার প্রধান ঘাঁটি থেকে প্রায় ৩০ হাজার ভক্তকে বেরিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশে কোনো ধরনের সহিংসতা মেনে নেয়া হবে না। তবে তার রাজনৈতিক দল হরিয়ানার ক্ষমতাসীন বিজেপি রাজ্যের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০১৭)