রাজন্য রুহানি, জামালপুর : দু দফা বন্যায় জামালপুরের ৭টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় জামালপুরে এবার ক্রেতাশূন্য ঈদবাজার। ঈদ ঘনিয়ে এলেও বিপণীবিতানগুলোতে নেই ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি।

ঈদুল ফিতরে জামালপুরের দোকানপাট, অভিজাত মার্কেট ও বিপণীবিতানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবারের ঈদে তার ছিটেফোটাও নেই বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।

মার্কেটগুলোতে দোকানিরা বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতা নেই। দোকানে বসে অনেকটাই অলস সময় কাটাচ্ছেন দোকানিরা। যেসব দোকানিরা ধারদেনা করে মালামাল কিনেছেন, লোকসানের আশঙ্কায় সেসব মালামাল ঢাকায় মহাজনদের কাছে ফেরত পাঠাচ্ছেন তারা। যাদের মালামাল ফেরত পাঠাবার কোনো উপায় নেই, তারা চরম হতাশায় পড়েছেন। একদিকে ক্রেতা নেই, সামান্য যা বিক্রি হচ্ছে তা কেনামূল্যে বা কেনামূল্যের চেয়েও কিছু কম দামে বিক্রি করছেন অনেক দোকানিই।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ধারদেনা এবং সুদের উপর টাকা নিয়ে যে লগ্নি করা হয়েছে তা তো শোধ করতে হবেই, নইলে দোকানপাট ছেড়ে দিয়ে বেকার বসে থাকতে হবে। এবার ঈদমার্কেটে ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়বে বলে জানালেন জামালপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সেলিম জামান।

জামালপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী মার্কেটগুলোর মধ্যে কথাকলি মার্কেট অন্যতম। প্রতিবার এই মার্কেটে ঈদের ১০-১৫ দিন আগে থেকেই পা ফেলার জায়গাও থাকে না। ক্রেতাদের উপস্থিতি ও দোকানিদের বিক্রির ব্যস্ততায় সরগরম থাকত। ক্রেতা সামলাতে হিমশিমে পড়তে হতো দোকানিদের।

অথচ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার অভাবে দোকানিদের বিরস বদন আর ক্রেতাদের ডেকে ডেকে ক্লান্ত সেলসম্যানরা। আর মাত্র ঈদের বাকি ৪ দিন। এই মার্কেটে শহীদ স্টোর, সাহা এন্টারপ্রাইজ, একতা এন্টারপ্রাইজ, পূর্ণিমা ফ্যাশন, দিদার ব্রাদার্স একেবারেই ফাঁকা। দোকানে ক্রেতা নেই, মালিক কর্মচারীরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। কথা হয় দোকানের মালিক সুভাস সাহার সাথে।

মলিন মুখে তিনি বলেন, ঈদকে ঘিরে এই সময়ে আমার দোকানে বেচাবিক্রি ৭০ হাজার থেকে লাখ ছাড়িয়ে যেত। এবার ২০ হাজারও বিক্রি করতে পারি নাই। ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলাম। বেচাবিক্রির ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে মহাজনের বকেয়া টাকাই শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তার উপর সুদের টাকা পরিশোধ নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। মালিকের লোকসানে দোকানের গ্যালারিতে বসে থাকা কর্মচারীরাও নিঃশ্চুপ। তাদের মুখেও হাসি নেই।

প্রতি ঈদ বাজারেই সর্বোচ্চ বিক্রি করে সাহা এন্টারপ্রাইজ ও একতা এন্টারপ্রাইজ। একতা এন্টারপ্রাইজে ঢুঁ মেরে দেখা গেল দু-একজন ক্রেতা পোষাক নেড়ে চেড়ে দেখছে আর দরদাম করেই ফিরে যাচ্ছে। পোশাকের প্রতি ক্রেতার আকর্ষণ বাড়তে নিত্যনতুন ডিজাইন ও কাপড়ের গুণগত মান নিয়ে মুখে খই ফুটছে কর্মচারীদের। অথচ ক্রেতা ফিরেও তাকাচ্ছে না।

দোকানের কর্মচারী মাসুদ মন্ডল বলেন, বেচাবিক্রি নাই। ৭ লাখ টাকার রেডিমেট পোশাক ফেরত পাঠাইতাছি, মালিকের লোকসান গুনতে হবে। দোকানটিতে ঈদ বা পার্বণ ঘিরে এই সময়ে প্রতিদিন ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হতো। এবার ৫০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছি না বলে জানান তিনি।

তমালতলা মোড়ে একে প্লাজায় চারুতা ফ্যাশনের মালিক কামরুল হদা স্টাইলিন বলেন, প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি নেমে এসেছে ৪ হাজারে। চাঁদ রাত পর্যন্ত বেচাকেনা আরো খারাপ যাবে বলে আশংকা করছেন তিনি। এবার দোকানগুলোতে ভাল ডিজাইনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রি খারাপ দেখে মনে হয় দোকানিরা তেমন নতুন পোশাক তুলে নি।

সাবেক সামাদ মার্কেটের রবিন টেইলার্সের মালিক মো. লোকমান হোসেন জানান, ঈদের প্রায় ১ মাস আগে থেকেই আমরা অর্ডার পেতাম। এবার পোশাক তৈরির তেমন অর্ডার পাই নাই। কারিগরের বেতন দেওয়ার অবস্থাও নেই।

জুতার মার্কেটও মন্দা। শহরের মেডিকেল রোডে আজাদ ম্যানশনে দোলন সু ষ্টোরের মালিক শাহিনুল ইসলাম বলেন, গ্রামের মানুষ ভাল থাকলে আমাদের ব্যবসাও চাঙা থাকে। কেনাকাটা যারা করবে তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ। এবার বেচাকিনি খুব খারাপ অবস্থা। আজ মাত্র ৪ হাজার টাকা বেচেঁছি। এমন সময় ৫০ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হতো।

রওশন আরা ম্যানশনের ম্যাক্স ফুটওয়ারের কর্মচারী মতিউর রহমান বাদল জানান, বেচাবিক্রির অবস্থা দেখে শংকায় রয়েছি মালিকরা আমাদের বোনাস দিতে পারবে কিনা। এছাড়াও থান কাপড়, কসমেটিক্সসহ অন্যন্য মার্কেটেও একই পরিস্থিতি।

বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ঈদ বাজারেও। উপজেলার ঈদ মার্কেটগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। দু দফা বন্যায় ৭ উপজেলার ৮ লাখের উপরে মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় জামালপুরে এবারের ঈদবাজার খুবই মন্দা।

(আরআর/এসপি/আগস্ট ২৮, ২০১৭)