কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : তপ্ত লোহার আগুনে আলোকিত কর্মব্যস্ত কামারের মুখমণ্ডল। লাল আভার সঙ্গে মুখের হাসি মিলিয়ে যেন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। হবে নাই বা কেন, মাত্র কয়েকদিন পরই যে কোরবানির ঈদ। তাই তো কাজের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কুষ্টিয়ার কামারদের প্রাণচঞ্চলতা।

হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ির ঢং ঢং শব্দে মুখর এখন কুষ্টিয়ার কামারশালাগুলো। কোরবানির পশুর মাংস কাটাকাটি আর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত চাপাতি, দা, ছুরি, বটিসহ কিছু ধারালো অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামারেরা। এসব ধারালো অস্ত্র ক্রেতার চাহিদা মতো সরবরাহে কামার শিল্পীরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদ যত কাছে আসবে, বিক্রি তত বেশি হবে বলে জানান কামারেরা।

স্থানীয় কামারেরা জানায়, পশু জবাইয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি এসব পণ্য। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদের সময়টাতে কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয়-রোজগারও। বছরে দুর্দিন থাকলেও এখন সুদিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার গ্রামেগঞ্জে ও বিভিন্ন হাট বাজারের কামারেরা দেশি প্রযুক্তির দা, কুড়াল, বটি, খুন্তা ও কাটারি বানাতে ব্যস্ত। হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যে গ্রামের লোকজন গরু, ছাগল জবাই এবং মাংস কাটতে কামারদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র বানানোর বায়না দিয়েছে। তাই তো কামার পল্লীর বাতাসে উড়ছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ।

কুষ্টিয়া সদরসহ প্রতিটি হাট-বাজারে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কামার কারিগরেরা সারা বছরের তুলনায় বর্তমানে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

শহরের রাজারহাটের নগেন কর্মকার বলেন, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমাদের পেশা, পৈত্রিক সূত্রে আমরা এই পেশায় জড়িত। একটি মাঝারি ধরনের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি, তা বিক্রি করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আদি এই পেশা আমরা ধরে রেখেছি। তবে সারা বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কোরবারির ঈদকে সামনে রেখে আমাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

গনেশ চন্দ্র কর্মকার জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্র ধরে আমার জীবনের শেষ মুহূর্তেও এই পেশা ধরে রেখেছি। সারা দিন কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি। এই পেশা ছেড়ে অন্য কোনো ভালো পেশায় যে যাব, এই রকম আর্থিক সঙ্গতি আমার নেই। তবে সরকারিভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের কামাদের সুদমুক্ত ঋণ দিলে এবং পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প আগের মতো ঘুরে দাঁড়াবে।

(ওএস/এএস/আগস্ট ২৯, ২০১৭)