হুমায়ূন কবির জীবন, কুমিল্লা : মাত্র ৩ দিন বাকি। কিন্তু ক্রেতা নেই গরুর বাজারে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একজনকেও গরু কিনে নিয়ে যেতে দেখেননি বাজারের আশপাশের দোকানীরা। কিন্তু কুমিল্লার গরুর হাট বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় প্রচুর সংখ্যক গরু উঠেছে। হাটের ইজারাদাররা হাট-বাজারগুলো নানাভাবে সাজিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কুমিল্লার চকবাজারের ৮ লাখ টাকা দামের তিনটি গরু এনেছেন ব্যাপারী জাফর আলী। কোন কোন ক্রেতা একটি চার লাখ টাকা দাম হেকেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তার গরু কিনলে একটি খাসি ফ্রি দেবেন তিনি।

কুমিল্লার চার শতাধিক স্থায়ী অস্থায়ী বাজারের মধ্যে চকবাজার, বৌয়ারা বাজার, নেউরা বাজার, চৌয়ারা বাজার, দুতিয়াদিঘিরপাড়সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের নজর কাড়তে চলছে নানা প্রয়াস চালাচ্ছেন ইজারাদাররা। চলছে শেষ মুহূর্তের সাজগোজ। ক্রেতারা হাটবাজারগুলোতে ঘুরাঘুরি করছেন। দাম যাচাই-বাছাই করছেন।

কুমিল্লার কাপড়িয়াপট্ট্রি নাসিরুল ইসলাম মজুমদার জানান, তিনি বৌয়ারা বাজার, চকবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরেছেন। গরুর দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকলেও ক্রেতা নেই। বাজারে গরু অনেক, কিন্তু দিনভর গরু বিক্রি হতে তেমন দেখেন নি তিনি। ঈদের মাত্র তিন দিন আগে এই পরিস্থিতি আভাষ দেয় মানুষের কাছে টাকা নেই।

কুমিল্লার চানপুর বাজারে ঘুরে গিয়াস উদ্দিন একরাম জানান, চানপুর বাজারে ট্রাকে ট্রাকে প্রচুর গরু এসেছে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কয়েকজন ক্রেতা ছাড়া তেমন ক্রেতা নেই।

কেন ক্রেতা নেই তা জানাতে না পারলেও বলেছেন, ঈদের এক/দুই দিন আগে ক্রেতা আসতে পারে। মমিন আহমেদ রনি জানান, চকবাজার, বৌয়ারা বাজার, নেউরা বাজার ঘুরেছেন তিনি। গরু বিক্রেতারা গরুর দাম বেশি চাইছেন। অন্তত গরু প্রতি বিশ হাজার টাকা বেশি চাইছেন। ক্রেতাদেও প্রতারিত হওয়ার মত অবস্থা। এর কারণ ভারতীয় গরু না আসা।

কুমিল্লা শহরের চকবাজারের গরু ব্যবসায়ী জাফর আলী জানান, পাকিস্তানি জাতের তিনটি গরু তিনি বাজারে তুলেছেন। এগুলোর বাচ্চা সংগ্রহ করে চার বছর ধরে যশোরে লালন পালন করেছেন। এখন বাজারে তুলেছেন। দাম চাইছেন ৮ লাখ টাকা। তবে সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে বিক্রি করবেন তিনি। কোন কোন ক্রেতা চার লাখ হেকেছে।

তিনি জানান, তিনটি গরুর মধ্যে ২টি ১৮ মন করে এবং একটি ১৭ মন করে ওজন হবে। এই গরু কিনলে একটি খাসি ফ্রি দেয়া হবে। খাসির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে হবে ।

চকবাজার গরু হাটের ইজারাদার হানিফ মাহমুদ জানান, এবার তার বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। ৮ লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার গরু আছে। তাছাড়া পাবনা, কুষ্টিয়া থেকেও গরু এসেছে। ভারতীয় গরু ও স্থানীয় খামারিদের গরুও আছে।

কিন্তু ক্রেতা খুব কম জানিয়ে তিনি বলেন, সোমবার ও মঙ্গলবার তার বাজারসহ আশপাশের বাজারে গরু শতকরা ২ ভাগও বিক্রি হয়নি অন্য বছরগুলোর তুলনায়। তবে ঈদের আগের দুই দিন বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

কুমিল্লার বলারামপুরের কুতুবে রাবা¦ানী রুবেল শখ করে ২১টি গরু লালন পালন করে এখন বিক্রির চেষ্টা করছেন। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে গরু রয়েছে তার কাছে। এক লাখ টাকায় ৪/৫ মন ওজনের গরু পাওয়া যাবে বলে জানান রুবেলের ভাই নোমান। তিনি জানান, ক্রেতারা দেখছেন। কাল গরুগুলো হাটে তুলবেন।
কুমিল্লা শহরের নেউরা বাজারের ইজারাদার সহিদুল্লাহ রতন বলেন, কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বাজার এই নেউরা বাজার। এখান থেকে শহরের মানুষ পছন্দের গরু ক্রয় করেন। গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি গরু উঠবে।

তিনি জানান, পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে যেন বাজারে কোন প্রকার বিশৃংখলাকারী প্রবেশ করতে না পারে।

এ দিকে কোরবানীর পশু নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করে পশুর বর্জ্য অপসারন নিশ্চিত করনের লক্ষে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

(এইচকেজে/এএস/আগস্ট ২৯, ২০১৭)