রাজন্য রুহানি, জামালপুর : সিনেমাহলে প্রবেশ নিয়ে বাকবিতন্ডার জের ধরে সিনেমা শেষে হলের সামনেই প্রতিপক্ষদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছে মমিনুল ইসলাম জিসান (১৭) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। রবিবার রাত ১২ টায় শহরের মনোয়ার সিনেমা হলের সামনে ঘটেছে ঘটনাটি। শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে নিহত জিসান সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। জিসান হত্যার বিচারের দাবিতে সোমবার আধাবেলা সড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট পালন করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী।

নাইট শো সিনেমার টিকিট কাটার পর হলে প্রবেশ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা জিসানসহ তার বন্ধুদের সাথে বাকবিতন্ডা হয় পাথালিয়া গ্রামের রাহী, কাউছারসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের। সিনেমা দেখতে আসা লোকজন দু পক্ষকেই শান্ত করেন। সিনেমা দেখে বের হওয়ার পর হলের সামনে জিসানের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পাথালিয়া গ্রামের যুবকরা। স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর আহত জিসানকে জামালপুর হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন রাত ২ টা ১২ মিনিটে কর্তব্যরত ডা. সৌমিত্র কুমার বণিক জিসানকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও জিসানের পারিবার।

হত্যা ঘটনায় সোমবার আধাবেলা সড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট পালন করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসী। হত্যাকারী রাহী ও কাউছার গংদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবিতে শহরের গুরুতপূর্ণ পয়েন্টের প্রধান সড়কে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে অবরোধকারীরা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলাকালে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিচারের দাবিতে দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসেন ব্যবসায়ীরা। এই অবরোধ ও ধর্মঘটে যোগ দেন নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। বন্ধ ছিল শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার ব্যবসায়ীদের দোকানপাট। সকাল থেকে বের হয় মিছিলের পর মিছিল। উত্তাল হয়ে ওঠে জামালপুর।

অর্ধবেলা সড়ক অবরোধ ও মিছিল শেষে শহরের তমালতলা মোড়ে জিসান হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক রেজাউল করিম রেজনু প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, স্কুলছাত্র জিসানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছুরিকাঘাতের সময় জিসান মুসলিমাবাদের বাসিন্দা বললে হত্যাকারীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এই হত্যাকান্ড নিয়ে যদি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হয় তবে জামালপুর শহর অচল করে দেয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি। হত্যাকারীদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তিনি মাঠে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মিজান চৌধুরী, বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন, আব্দুস ছাত্তারসহ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বক্তব্যকালে এলাকার গণ্যমান্যরাও বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সমাবেশ থেকে জিসানের হত্যার কর্তব্যরত ডাক্তার সৌমিত্র কুমার বণিকের দ্বায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তোলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবিও জানান বক্তারা।

(আরআর/এএস/০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭)