গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুঃ আবদুল হালিম মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ,স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা আগের চেয়েও ভয়াবহ বলে অভিযোগ উঠেছে। জানিনা কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তার দুর্নীতি ,স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা আগের চেয়েও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবেদনকারী বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর।

সূত্র জানায় চলতি বছরের ১৫জুলাই গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২জন শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ১১জন সিনিয়র শিক্ষক-শিক্ষিকার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবরে প্রধান শিক্ষক মুঃ আবদুল হালিমের সীমাহীন দুর্নীতি, অতৃপ্ত লোভ, স্বজনপ্রীতি এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি স্বেচ্ছাচারিতামূলক অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ৩০টি খাত দেখিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গত ৮ই আগস্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাননীয় সংসদ সদস্য আ.খ.ম. জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপি গঠন ও সংশোধন মূলক দিক নির্দেশনা দেন। এর পর তা উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষকের প্রতি তার অত্যাচার ও অবিচারের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সভাপতি এমপি মহোদয়ের সুযোগ্য পুত্র ও গলাচিপা উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক আ.স.ম. জাওয়াদ সুজন বারবার অনুরোধ করা সত্তে¡ও প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবান করেননি। এছাড়া বিদ্যালয়ের দুটি টিন শেডের মেঝ পাকাকরণের কাজ সংশ্লিষ্ট কমিটির তদারকি ছাড়াই তাদের অজ্ঞাতসারে প্রধান শিক্ষক একাই কাজ করাচ্ছেন এবং সুবিধামত রশিদ লিখে টাকা আত্মসাৎ করছেন। শিক্ষকদের জন্য বরাদ্ধকৃত শৌচাগার নির্মাণের কাজ এখনো শুরু করেননি এবং আদৌ নির্মাণ করবেন কিনা সে ব্যাপারে সন্দিহান।

শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি নতুন স্কেলে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ভাতা ও বোনাস প্রদান যা প্রধান শিক্ষক বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও রক্ষা করেননি। কিন্তু তার স্বজনপ্রীতি এতই নির্লজ্জ আকার ধারণ করেছে যে, তিনি তার কন্যা (অত্র বিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা) ফাতিমা আক্তার রুবিকে চাকরির শুরু থেকেই নতুন স্কেলে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ভাতা ও বোনাস দিয়ে আসছেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

চলতি বছর ঈদুল আযহার পূর্বে অন্যান্য সকল শিক্ষক - কর্মচারীর আগস্ট/২০১৭ মাসের অভ্যন্তরীণ ভাতা ও বোনাস পরিশোধ করলেও ভাগ্যে জোটেনি ঐ ১১জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ভাতা ও বোনাস। ২ জন কমিটির সদস্য ও ২ জন শিক্ষক সমন্বয়ে অডিট কমিটি গঠিত হলেও প্রধান শিক্ষকের পছন্দনীয় শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত না করায় দীর্ঘ দেড় মাস পরেও অডিট কার্যক্রম শুরু করতে দেয়া হয়নি । বিধি মোতাবেক জরুরী সভায় একটি মাত্র বিষয়ে আলোচনা করার বিধান থাকলেও গত ১৩ই আগস্ট বিদ্যালয়ের জরুরী সভায় চারটি আলোচ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

১১ জন শিক্ষকের কেউই নৈমিত্তিক ছুটি চেয়ে ছুটির অনুমোদন পায় না, বরং তার পছন্দের অন্যান্য শিক্ষকরা চাহিবা মাত্র ছুটির অনুমোদন পেয়ে থাকে। ঐ ১১ জন শিক্ষকের ছুটির দরখাস্ত প্রধান শিক্ষক ‘ছুটি দেয়া গেল না’ লিখে স্বাক্ষর করেন এবং বলেন যে,“ সহকারী শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটি বলতে কোন ছুটি নেই। আমার যাকে খুশি তাকে ছুটি দেব।” বিদ্যালয়ের ক্লাশ রুটিন বছরের আট মাসের মাথায় এসে প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছাচারিতা মূলক ভাবে পরিবর্তন করে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন।

সরকারি বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়ের সময়কাল সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টা ব্যাপী হলেও বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত না করে ২ শিফ্ট চালুর মাধ্যমে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ৮ ঘন্টা ব্যাপী বিদ্যালয় চালু রেখে সুকৌশলে রুটিনের মারপ্যাচে ঐ ১১ জন শিক্ষককে শায়েস্তা করছেন এবং অন্যান্য শিক্ষকদের ৬ ঘন্টা বা তার কম সময়ের মধ্যে ক্লাশ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছেন। জেএসসি ফরমপূরণ ও নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশনের অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা প্রধান শিক্ষকের উপরও নাখোশ।

এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রেজুলিউশনে প্রধান শিক্ষক সাহেব তা না লিখে তার সুবিধা মত তা পরিবর্তন করে লিখেন। এভাবে প্রধান শিক্ষকের নানাবিধ অনিয়মের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ট। যার ঐতিহ্য ধরে রাখার পিছনে নিবেদিত চিত্তে পাঠদান করে আসছেন ঐ ১১জন শিক্ষক। অথচ পান থেকে চুন খসলেই নোটিশ এবং লাল কালির শিকার হন বিদ্যালয়ের জন্য নিবেদিত ১১জন শিক্ষক। অন্যান্য শিক্ষকদের সুবিধা দানের পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক সাহেব নিজেও কম সুবিধা নেন না। তিনি বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চলাকালীন সময় বাসায় বসে মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি কাটান।

উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের তহবিলে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের কথা মতে ১৪ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধৃত্ত থাকা সত্বেও তার তৈরী রেজুলিউশনের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৬ খ্রিঃ পর্যন্ত ৩বছরের বকেয়া অভ্যন্তরীণ ভাতাদি পরিশোধ করেননি তৎকালীন কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের। যাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানেও কর্মরত আছেন। অনেকে অবসর গ্রহণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং অনেকেই অবসরের পর মারা গিয়েছেন।

এ সকল শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ এবং মৃত জনের ওয়ারীশগণ সভাপতি বরাবরে তাদের বকেয়া পাওনা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মুঃ আবদুল হালিম বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করার অমানবিক হুমকি প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ করেন।

সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, ম্যানেজিং কমিটি এবং সুশীল সমাজের কাছে প্রশ্ন গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুঃ আবদুল হালিমের এই ঔদ্ধত্ত্বপূর্ণ দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা,স্বজনপ্রীতি এবং নিরীহ শিক্ষকদের উপর অন্যায়- অত্যাচারের কি অবসান হবে কি ? মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করে স্বর্নকমল সদৃশ অট্টালিকায় বসবাস করে অঢেল ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়ে আর কত কাল প্রধান শিক্ষকের আসনে বসে নৈতিকতা পরিপন্থি কাজ করে যাবেন দুর্নীতির শিরোমনি মুঃ আবদুল হালিম ? - এই প্রশ্ন রইল বিবেকবান সুধি সমাজের কাছে।


(এসডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭)