শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়া ওয়াপদা লঞ্চঘাট থেকে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তলিয়ে যাওয়া তিনটি লঞ্চের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারি জাহাজ প্রত্যয়। দুইদিন পেরিয়ে গেলেও অন্তত ৩০ জন নিখোঁজের কারুরই সন্ধান করতে পারেননি উদ্ধারকারি নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটি এর ডুবুরী দল। উদ্ধার কাজের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এলাকাবাসী ও নিখোঁজের স্বজনদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ভোর থেকেই শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদী তীরে ব্যাপক এলাকা জুরে এসে হাজির হয়েছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। তারা আহাজারী করেছেন নদী পাড়ে বসে।

সোমবার বিকেল পৌনে চারটায় নারায়নগঞ্জ থেকে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর এলাকায় এসে পৌছে বিআইডব্লিউটিএ এর উদ্ধারকারি জাহাজ প্রত্যয়। নৌ বাহিনীর ডুবুরী দল ভেদরগঞ্জের চরমোহন এলাকায় নিখোঁজ হওয়া এম,ভি মৌচাক লঞ্চটির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। কিন্তু উদ্ধারকারি জাহাজের নোঙর ছিরে যাওয়ায় সোমবার তারা উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ডুবুরী দল বার বার চেষ্টা করেও প্রচন্ড স্রোতের কারনে মৌচাক লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেননি। মঙ্গলবার বিকেলে চরমোহন থেকে উদ্ধারকারি জাহাজটি দূর্ঘটনা কবলিত ওয়াপদা এলাকায় এসে নোঙর করে।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে পদ্মা নদীর শুরেশ্বর এলাকায় একটি লাশ উদ্ধার হলে পুলিশ প্রথমে সেটি নড়িয়া-২ লঞ্চের কেরানি সজল তালুকদারের লাশ বলে প্রচার করেন। পরবর্তিতে স্বজনরা এসে লাশটি সজল তালুকদারের নয় বলে সনাক্ত করেন। ভেসে আসা মরদেহের পকেটে থাকা একটি মোবাইল ফোন থেকে পুলিশ নিশ্চিত হন, উদ্ধার হওয়া মরদেহটি লঞ্চ ডুবির নয়। এটি খুলনা জেলা থেকে ৫ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া জনৈক সজল পালের লাশ।

সুরেশ্বর মাছঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নারায়নগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী দিলীপ দে তার শ্যালকের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন। তিনি জানান, নড়িয়া-২ লঞ্চের কেবিনে ছিলেন নারায়নগঞ্জের কালীবাজারের র্স্বণের দোকানদার রিপন দাস। দুই দিন পার হয়ে গেলেও তার শ্যালক রিপনের লাশটি উদ্ধার করেত পারেনি এতগুলো টিম।

এমনিভাবে মৌচাক-২ লঞ্চের বাবর্চি মানিক মাদবরের স্ত্রী ফাতেমাসহ অনেককেই আহাজারি করেত দেখা গেছে নদী পাড়ে।

নৌ বাহিনীর খুলনা তিতুমীর ঘাটির ল্যাফটেন্যান্ট মো. কাওসারুল ইসলাম বলেন, আমি ১০ জন ডুবুরী নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নদীতে এত ¯্রােত যে, আমাদের ডুবুরীরা পানির নিচে গিয়ে কোন শক্তি পাচ্ছেনা। আমরা মৌচাক-২ লঞ্চটি সনাক্ত করার পরেও তা উদ্দার করতে পারছিনা।

উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ে থাকা বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) মো. ফজলুর রহমান বলেন, ৩০ থেকে ৪০ ফিট পানির নিচে রয়েছে সনাক্তকৃত লঞ্চ এমভি মৌচাক-২। সেখানে কোন ডুবুরী গিয়েই টিকতে পারছেননা। মাত্র ৫-৬ ফিট পানির নিচে গিয়ে প্রবল স্রোতের কারনে তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের একজন ডুবুরী আবুল খায়ের অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা জাহাজটিকে এখন ওয়াপদা ঘাটে এনে নোঙর করেছি। নতুন কোন লঞ্চের সন্ধান পেলে সেটিকে বুধবার থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করবো।

(কেএনআই/এএস/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭)