রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : সোনালি আঁশে স্বপ্ন বুনছেন লোহাগড়ার কৃষক। মাঠে শুরু হয়েছে পাট কাটা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে চাষিরা পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

তাঁরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকির অভাবে কষ্টের ফল ভোগ করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পাট চাষীরা।

তাঁরা আরও জানান, বাজারে দাম না পেয়ে লাভ তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। আর্থিক ভাবে লোকসান গুনে হতাশায় দিন কাটাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চাষীরা।

এদিকে সরকারিভাবে পাট ক্রয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লোহাগড়ায় এবার মোট ১৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমি পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কৃষকদের মাঝে পাট চাষে অনাগ্রহ ও হতাশার কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। ফলে এবছর ৮৩০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম পাট আবাদ হয়েছে।

বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গড়ে একর প্রতি জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে ২ হাজার ২০০ টাকা, বীজ বাবদ ৬০০ টাকা, সার বাবদ ২ হাজার টাকা, সেচ বাবদ ৮ হাজার টাকা, নিড়ানি বাবদ শ্রমিক (জন) খরচ ৯ হাজার টাকা, পাট কাটা ও জাগ (পচানো) দেওয়া বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসেবে এক একর জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৫১ হাজার ৮০০ টাকা।
জমির প্রকার ভেদে গড়ে পাট আবাদ হয়েছে একর প্রতি ৩০ মন। যার বর্তমান বাজার মুল্য পাটকাঠিসহ গড়ে ৪৭ হাজার টাকা। ফলে কৃষককে পাট চাষে একর প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা।

এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঘা পূর্বপাড়ার কৃষক শেখ তুষার বলেন, এবছর আমি ৬ একর জমিতে পাট আবাদ করেছি। তবে বর্তমান বাজারে পাটের যে দাম সেই হিসেবে লোকসানে আছি। সরকার যদি নুন্যতম মন প্রতি পাটের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০টাকা করে তাহলে পাটের সোনালী দিন ফিরে আসবে। অন্যথায় পাট চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক।

সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সরকারিভাবে পাট ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা এখন পাটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রন না থাকায় তারা ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করে পাট ক্রয় করছেন।

লোহাগড়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন ও আশরাফুল আলম বলেন, গতবছর বিভিন্ন জেলার জুটমিল থেকে পাইকারী ভাবে পাট কিনতে মহাজনরা আসতেন। কিন্তু এ বছর কেউ এখনও পাট কিনতে আসছে না। ফলে আমরা পাট ক্রয় করতে ভয় পাচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, গতবছর কৃষকরা পাটের ভালো দাম না পাওয়ায় এবছর তাঁরা আউশ এবং আমন ধান চাষে ঝুঁকছেন। ফলে পাটে চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭)