ইমরান হোসেন, বরগুনা : বরগুনায় ধূমপানে আসক্ত করতে হরেক রকম চেষ্টা চালাচ্ছে বিড়ি-সিগারেট কোম্পানিগুলো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনবরত চেষ্টা চালিয়ে বিড়ি-সিগারেট খেতে অধূমপায়ীদের উৎসাহিত করছেন তারা। তাদের লক্ষ্য স্কুল কলেজের ছাত্র ও গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের ধূমপায়ী করা। আবার অনেক বিড়ি-সিগারেট কোম্পানী নব্য ধূমপায়ীদের জন্য দিচ্ছেন নানা রকম পুরুস্কার। ধূমপান বন্ধে কাজ করা সংগঠগুলোর দাবি বিড়ি-সিগারেট কোম্পানিগুলো আইন লঙ্গন করে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে অধূমপায়ীদের ধূমপানে উৎসাহিত করছেন কিন্তু প্রশাসনের অবস্থান খুবই নাজুক।

জেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বিড়ি-সিগারেট কোম্পানীর কর্মিরা আকর্ষনীয় উপহার দিয়ে অধূমপায়ীদের উৎসাহিত করছে ধূমপানের জন্য। যারা ধূমপান করেনা তাদেরকে ধূমপান করার জন্য দেয়া হয় ফ্রি বিড়ি-সিগারেট। তার সাথে উপহার দিচ্ছে বিড়ি- সিগারেট কোম্পানীর টি-সার্ট। সাথে বিভিন্ন ধরনের গ্যাসলাইট। এ ছারাও যারা ধূমপায়ী তাদেরকে ব্রান্ড পরিবর্তন করার জন্য উপহার দিচ্ছে মূল্যবান পুরুস্কার। তাদের মূল লক্ষ্য স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাদেরকে উপহার দিচ্ছে ফ্রি সিগারেট।

এ সময় বরগুনা পৌর সুপার মার্কেটের পিছনে সরেজমিনে দেখা যায় মোবাইল নম্বর দিয়ে ফ্রি সিগারেট নিচ্ছে স্কুল ড্রেস পরা অবস্থায় বরগুনার সুনামখ্যাত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন ছাত্র। ক্লাশ ফাকি দিয়ে চলে এসেছেন মার্কেটের পিছনে।

তারা ভীত অবস্থায় বলেন, তারা তিনজনই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র। মাঝে মাঝে স্কুল ফাকি দিয়ে পৌর সুপার মার্কেটের পিছনের এলাকার চায়ের দোকানে সময় কাটায়। আর মাঝে মধ্যেই সিগারেট কোম্পানীর দেয়া ফ্রি সিগারেট নিয়ে ধূমপান করেন। বিনিময়ে তারা তাদের মোবাইল নম্বর সিগারেট কোম্পানীর কর্মিদের দিয়ে দেন এবং পরবর্তিতে কোম্পানীর অফিস থেকে কল দিয়ে তারা নিশ্চিত হয় যে তারা নির্দিস্ট ব্রান্ডের সিগারেট পান করেছেন কিনা।

বরগুনার টাউনহল ট্রাক স্টানের সামনে দেখা যায় আকিজ বিড়ি কোম্পানীর কিছু কর্মীরা কিছু গরিব শ্রেনীপেশার লোকজন সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করিয়ে কিছু ছবি তুলে নিল। তাদেরকে উপহার স্বরুপ প্রত্যেককে এক প্যাকেট আকিজ বিড়ি, একটি ক্যাপ ও একটি গ্যাস লাইট দিল।

আকিজ বিড়ি থেকে উপহার পাওয়া গোবিন্দ শীল নামে একজনের সাথে কথা বলার পর সে জানায়, সে একজন দিনমজুর। প্রতিদিন টাউন হলে আসেন কাজের জন্য। আকিজ বিড়ি কোম্পানীর লোকজন মাঝে মাঝে এখানে আসে আর তাদেরকে ফ্রি ধূমপান করায়। সাথে নানা রকম উপহার দেয়। সে আরও জানায় আগে তার ধূমপানের অভ্যাস ছিল না, এখন ধূমপান তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

তবে এ বিষয় আকিজ বিড়ি কোম্পানীর বরগুনার ডিস্টিবিউটরের সাথে কথা বলার জন্য একাধীক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

ধূমপান বন্ধে কাজ করা সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোড়ণের উপদেষ্টা ও প্রবীণ সাংবাদিক সোহেল হাফিজ বলেন, আমরা নেশা মুক্ত জীবন চাই, নিকোটিন মুক্ত বাতাস চাই। কিন্তু যে হারে দিনের পর দিন প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে বিড়ি-সিগারেট কোম্পানীগুলো তাতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। আর এখানে প্রসাশনের অবস্থান সন্তোশজনক নয়। ধূমপানের পক্ষে প্রচার প্রচারনা করলে সরকারের আইন রয়েছে তবে সে আইনের প্রয়োগ নেই বরগুনায়।

ধূমপানে উৎসাহিত করা বিড়ি-সিগারেট কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আস্বাস দিয়ে বরগুনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. নুরুজ্জামান বলেন, প্রসাশন সচেষ্ট রয়েছে এসব বিষয়ে। বিগত দিনেও এসব আইন লঙ্গনকারীদের মোবাইল কোর্টের আওতায় আনা হয়েছে। আগামী দিন গুলোতেও উলেøখ যোগ্য স্থান গুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইনের ৫ এর ধারায় বর্নিত আছে এই ধারা অমান্য করে আইন লঙ্ঘন করলে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিক ভাবে উক্ত দন্ডের দ্বিগুন হারে দন্ডনীয় হইবে।

(আইএইচ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭)