নওগাঁ প্রতিনিধি : বানের পানি নেমেছে কিছুদিন আগে। তবে ঘা এখনও শুকায়নি বানভাসিদের। বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে নওগাঁর বন্যাদূর্গত এলাকার মানুষ। জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেও শুরু করেছেন তারা।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে জেলার ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ফলে আমন ও সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বানের পানি নেমে যাওয়ায় বানভাসি কৃষকরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন।

তবে ধানের চারা সংকট থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নতুন করে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। অনেক কৃষক সরকারি সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ বছর জেলায় ৫৪ হাজার ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরবর্তী করণীয় নিয়ে ১১ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ৮০০ কৃষককে বিনামূল্যে ৫ কেজি করে বীজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ৬০০ কৃষককে ধানের চারা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ধামইরহাট উপজেলায় ২৫০ জন, পত্নীতলায় ১৯০ জন, মান্দায় ১০০ জন এবং সাপাহারে ৬০ জন কৃষক।

গত ১৩ আগস্টের বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলায় ৭২টি ইউনিয়নের ৫শ ৮১টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়। ফলে এসব এলাকার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে পুনরায় ফসল রোপনের জন্য চেষ্টা করছেন তারা। তবে ধানের চারা সংকটের কারণে অনেকেই আমনের ধান রোপন করতে পারছেন না। কেউ কেউ আবার চড়া দামে ধানের চারা কিনে রোপনের চেষ্টা করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকায় কৃষকরা এখনও সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। ব্যক্তি উদ্যোগে যেটুকু সহযোগিতা পেয়েছেন তা নিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। তবে কৃষি কার্ড না থাকায় অনেকে সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি।

নওগাঁ সদর উপজেলার গাংজোয়ার গ্রামের বর্গাচাষী ইদ্রিস আলী বলেন, বর্গা নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। বন্যায় সব জমি তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে পঁচে গেছে। বাজারে ধানের চারা দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পুন (৮০ আটি)। যেখানে খাবারের সমস্যা সেখানে এত টাকা দিয়ে ধানের চারা কেনা সম্ভব না। বর্গাচাষী বলে কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না।

কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে কিছু ধানের চারা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে চার কাঠা জমিতে নতুন করে রোপন করলাম। বীজের অভাবে এখনও তিন বিঘা পরিমাণ জমি অনাবাদি ফেলে রাখতে হয়েছে। বাজারে ধানের চারা যেটুকু আছে উচ্চমূল্য হওয়ায় কেনা সম্ভব না।

বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বন্যায় নষ্ট হওয়া পটলের মাচা ভেঙে নতুন করে তৈরি করছেন। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমির পটলের খেত থেকে মৌসুমে প্রায় ১ লাখ টাকার উপর বিক্রি হয়ে থাকে। সেখানে মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিক্রির পর বন্যায় সম্পূর্ণ পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া ১০ কাঠা জমির মরিচ ও ১ বিঘা জমির পাট নষ্ট হয়ে গেছে।

সমাজসেবী তাসলিমা ফেরদৌস বলেন, বন্যায় চারিদিকে সবকিছুই প্লাবিত। বানভাসিরা যেখানে খেতে পাচ্ছে না সেখানে ফসলের উপকরণ কেনা তাদের পক্ষে অসম্ভব। এমন ধারণা থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের ক্ষুদ্র চেষ্টায় কৃষকদের মাঝে ধানের চারা ও শাকসবজির বীজ বিতরণ করেছি। যাতে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহস পায়। আমাদের দেখাদেখি যেন অন্যরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি যেন কৃষক পুষিয়ে নিতে পারে এজন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণোদনার মাধ্যমে চারটি ফসল ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও গুটি বেগুনের বরাদ্দ আসছে। পুনর্বাসন বা প্রণোদনা কমিটির মাধ্যমে বিভাজন করে যে উপজেলায় এবং যেসব কৃষক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হবে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭)