রাজন্য রুহানি, জামালপুর : জামালপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ মেরামতের নামে থোক বরাদ্দের ৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬০ কিঃমিঃ ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ আংশিক মেরামত করে বাকি টাকা লোপাট করেছে রেল কর্মকর্তারা।

ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে ঢাকা-জামালপুরের কতিপয় রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের মধ্যে। জামালপুর রেলওয়ে জংশনের চারপাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে এই টাকা ভাগ বাটোয়ারের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ মেরামতের নামে রেলের মোটা অংকের টাকা লোপাটের ঘটনাটি তদন্তের দাবি জানিয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট।

জামালপুরে বন্যার পানিতে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর-তরাকান্দি রুটে ৬০ কিলোমিটার রেলপথ তলিয়ে যায়। এই দুই রুটের ক্ষতিগ্রস্থ দুটি স্থানে ৭০ ফুট রেললাইন মেরামতের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় জামালপুর-তারাকান্দি রুটে কেন্দুয়া স্টেশনের আউটার সিগন্যালের পাশে পানির স্রোতে ৪০ ফুট রেললাইন এবং জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রুটে জিলবাংলা সুগার মিলের কাছে ৩০ ফুট রেললাইনের নিচ থেকে মাটি ধসে গিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন চলাচল উপযোগী করতে রেলপথ মেরামতের জন্য দুটি গ্রুপে জরুরি প্রকল্প গ্রহণ করে রেলবিভাগ।

জামালপুর রেলওয়ে সেকশনে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে দুটি গর্তের স্থানে অন্তত পক্ষে ৪০টি স্থানে মাটি ধসে গর্ত সৃষ্টি হওয়ার কথা উল্লেখ করে অর্থ বরাদ্ধ চাওয়া হয়। রেলবিভাগ ৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্ধ দেয়। মেরামতের কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিয়ান এন্টারপ্রাইজ। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রেলের নিজস্ব শ্রমিক গ্যাংম্যানদের ব্যবহার করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামে মাত্র কাজ করে ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ মেরামতের বরাদ্ধের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কেন্দুয়া রেলস্টেশনের আউটার সিগন্যালে ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইন এলাকায় বন্যার পানি স্রোতে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি ধসে গিয়ে ২৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়। বালুভর্তি বস্তা ফেলে গর্ত ভরাট করে আড়াআড়ি লোহার এঙ্গেলের উপর স্লিপার বসিয়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। তদুপরি প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বস্তায় গর্ত ভরাট করায় ট্রেনের চাপে বস্তাগুলো দেবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের উপর দিয়ে এ রুটের ট্রেনগুলো ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের রেল দুর্ঘটনা। কাগজে কলমে বন্যায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিবরণ তৈরি করে মেরামত ও সংস্কারের নামে মোটা অংকের অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। বাস্তবের সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের অফিসিয়ালি পরিসংখ্যান তৈরী হয়নি এবং ২টি স্থানে রেললাইনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) কবির হোসেন রানা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ দ্রুত মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন স্টেশন থেকে নিজস্ব কর্মচারী ও শ্রমিক (গ্যাংম্যানদের) এনে কাজটি সম্পন্ন করেছি। তাঁর দাবি, কেন্দুয়ায় ৬০ ফিট ও দেওয়ানগঞ্জে ৫০ ফিট রেলপথ ক্ষতিগ্রস্থের তথ্য জানালে সরেজমিনে ৪০ ফিট জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্ধের কথা অস্বীকার করেন কবির হোসেন রানা।

জামালপুর রেলওয়ে জংশন সেকশনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আরবার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, রেলপথ মেরামতের জন্য কোনো প্রকার অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। তবে স্বীকার করেন যে, পিপিআরের মাধ্যমে রেলপথ মেরামতের কাজ করা হয়েছে। অর্থ লোপাটের অভিযোগ অমুলক বলে দাবি করেন তিনি।

(আরআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭)